[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

মকছুদারের এক টাকার পেঁয়াজু

প্রকাশঃ
অ+ অ-

প্রতিনিধি রংপুর

নিজের দোকানে পেঁয়াজু ভাজায় ব্যস্ত রংপুরের তারাগঞ্জের ইকরচালী বাজারের মকছুদার রহমান | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

বাজারের ব্যস্ত এক প্রান্তে ছয় হাত জায়গাজুড়ে ছোট্ট একটি দোকান। সন্ধ্যা নামার আগেই ভিড় জমে যায় দোকানটিতে। মুচমুচে পেঁয়াজি, ধনেপাতার চপ আর গরম তেল পিঠার ঘ্রাণ সেখানে। এই দোকানের সুনাম ছড়িয়েছে এক টাকার পেঁয়াজুর জন্য।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালী বাজারে ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া ইকরচালী-বরাতি সড়কের ধারে সরকারপাড়া গ্রামের মকছুদার রহমানের দোকান। ২০ বছর ধরে তিনি নিজ হাতে পেঁয়াজু তৈরি করে এক টাকায় বিক্রি করছেন।

মকছুদার রহমান বলেন, মানুষ খেয়ে তৃপ্তি পেলেই তাঁর শান্তি। লাভ কম হয় ঠিকই, কিন্তু অনেকেই নিয়মিত আসেন, খান, দোয়া করেন। এক টাকার পেঁয়াজুতে লাভ না হলেও পেঁয়াজু খেতে এসে অন্য খাবারও খান মানুষ। সেগুলোর লাভের টাকায় দিন চলে যায়।

শুরুর কথা বলতে গিয়ে মকছুদার রহমান বলেন, তাঁর ব্যবসার শুরুটা হয়েছিল সাদামাটাভাবে। ২০০৫ সালে মাত্র কয়েকটি পেঁয়াজু ভেজে বিক্রি শুরু করেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল পেট চালানো। তখনো জানতেন না, এই ক্ষুদ্র প্রয়াস তাঁকে এলাকার মানুষের কাছে ‘পেঁয়াজু মকছুদার’ নামে পরিচিত করে তুলবে। সময় গড়িয়েছে, মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, বাজারে পেঁয়াজুর দাম বাড়ছে; কিন্তু মকছুদার তাঁর সিদ্ধান্ত বদলাননি। এখনো প্রতিটি পেঁয়াজুর দাম রাখেন এক টাকা।

মকছুদার তাঁর দোকানে পেঁয়াজুর পাশাপাশি রাখেন তেল পিঠা, বেগুনি, পাঁপড়, ধনেপাতার চপ, জিলাপিসহ নানা পদ। এগুলোর দামও দুই থেকে পাঁচ টাকার মধ্যে। প্রতিদিন তিনি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি করেন। এতে খরচ বাদে তাঁর ৬০০-৮০০ টাকা থাকে। দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে তাঁর দোকান।

সরেজমিন দেখা যায়, মকছুদারের দোকানে সন্ধ্যা নামতেই ভিড় জমে যায় মানুষের। কড়াই থেকে গরম পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ নামাতেই মুহূর্তে তা গ্রাহকদের হাতে চলে যাচ্ছে। গ্রাহকদের কেউ কেউ বসে, আবার কেউ ফুটপাতে দাঁড়িয়ে খান। চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা তাঁর।

তাঁর দোকানে কথা হয় ছুট মেনানগর গ্রামের ইকরামুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনি যখন প্রাইমারিতে পড়েন, তখন থেকে এই দোকানে পেঁয়াজু খান। লেখাপড়া শেষে বাজারে এলে বন্ধুদের নিয়ে তাঁর দোকানের ভাজাপোড়া খান। এখনো স্বাদটা একই আছে।

দিনমজুর জাহের আলী বলেন, বাজারে একটি পরোটা ১০ টাকা, একটি পেঁয়াজু ৫ টাকা। সেখানে মকছুদারের দোকানে এক থেকে পাঁচ টাকায় ভাজাপোড়া পাওয়া যায়। নিজে খাওয়ার পাশাপাশি বাড়ি ফেরার সময় স্ত্রী–সন্তানদের জন্যও নিয়ে যান তিনি।

মকছুদারের প্রশংসা করে বাজারের বয়োজ্যেষ্ঠ সবজি ব্যবসায়ী হামিদ মিয়া বলেন, ২০ বছর ধরে তিনি মকছুদারকে দেখছেন। কাউকে ঠকানোর কথা শোনেননি।

প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে বাজার থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেন। সেগুলো প্রস্তুত করে দোকান খুলে বসেন। দোকানই তাঁর ভরসা জানিয়ে তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখেন একদিন বড় দোকান করার।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন