প্রতিনিধি টাঙ্গাইল
দীর্ঘদিন ধরে দেশি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি লালন-পালন ও কৃষিকাজ করে জীবিকানির্বাহ করছেন শামসুল হক (৬৫)। কৃষিকাজে তেমন আয় না হওয়ায় ১০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান জাতের তিনটি গাভি কিনে ছোট একটি গরুর খামার করেন তিনি। দুটি গাভি দুধ দিত। প্রতিদিন আট লিটার দুধ বিক্রি করে তাঁর সংসার চলত।
গত শনিবার গভীর রাতে দুধ দেওয়া দুটি গাভিসহ খামারের চারটি গরু চুরি হয়। এর পর থেকে গোয়াল ঘরের দিকে তাকাতে পারছেন না শামসুল হক। শুধু ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। শামসুল হকের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বাগবেড় ইছাদিঘী গ্রামে। তাঁর খামারে তিনটি গাভি ও দুটি বাছুর ছিল। গোয়ালঘরের তালা ভেঙে চোর একটি গাভি রেখে চারটি গরু নিয়ে গেছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানালেন, শামসুল হকের বাড়ির ২০০ গজ দক্ষিণ দিকে সখীপুর-সিডস্টোর সড়ক। ওই সড়ক দিয়েই গভীর রাতে চোরেরা ট্রাকে করে গরুগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে।
আজ সোমবার দুপুরে শামসুল হকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, খামারের পাশে বসে কাঁদছেন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে শামসুল বলেন, রোববার ভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘরের দরজা খুলতে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন কে বা কারা ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘর থেকে তিনি তাঁর ছেলেকে ফোন দেন। ছেলের ঘরের দরজাতেও দুর্বৃত্তরা বাইরে থেকে শিকল আটকে দিয়েছে। পরে প্রতিবেশীরা এসে বাইরে থেকে আটকানো শিকল খুলে দেন। দ্রুত তাঁরা গোয়ালঘরে গিয়ে দেখেন, খামারের দরজার তালা ভাঙা, চারটি গরু নেই।
শামসুল হকের জামাতা খায়রুল ইসলাম বলেন, গরু চুরির বিষয়ে গত রোববার দুপুরে সখীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
এক দশক আগে তিনটি গাভি দিয়ে গরুর খামার শুরু করেন শামসুল হক। সন্তানের মতো স্নেহ-মমতা দিয়ে খামারটি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তিনি। আক্ষেপ করে শামসুল হক বলেন, গরু হারিয়ে সন্তান হারানের মতো তাঁর কষ্ট হচ্ছে। খামারের দিকে তাকাতে পারছেন না। শুধু কান্না আসছে। দুই দিন ধরে আর দুধ বিক্রি করতে পারছেন না। কীভাবে সংসার চলবে, বুঝতে পারছেন না।
শামসুল হকের একমাত্র ছেলে আবুল কালাম বলেন, ‘বাবার খামারের গরু বিক্রি করে দুই বছর আগে বিদেশ গিয়েছিলাম। দুই মাস আগে চলে এসেছি। তেমন আয় রোজগার করতে পারিনি। খামারটি আমার পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার অবলম্বন ছিল। একটি গাভি চোরেরা রেখে গেছে। কিন্তু গাভির বাছুর চোরে নিয়ে গেছে। ওই বাছুর ছাড়া গাভির দুধ দোহানো যাচ্ছে না। বাবার মুখের দিকেও তাকাতে পারছি না।’
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাকির হোসেন বলেন, একজন কৃষকের চারটি গরু চুরি হওয়ায় বিষয়ে জেনেছেন। গরু চোরসহ অপরাধীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কোরবানি ঈদ পর্যন্ত গরু খামারিদের সতর্ক থাকার জন্য বলা হচ্ছে।