প্রতিনিধি পাবনা

হাসপাতালে ডায়রিয়ার রোগী এত বেশি যে সবাইকে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। অনেককেই মেঝে, বারান্দা বা সিঁড়িতে চাদর পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শনিবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে  | ছবি: সংগৃহীত 

পাবনার ঈশ্বরদীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৮ জন আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৫১ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের প্রায় ৯০ শতাংশই ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারী। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ কারখানাগুলোর খাবার পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছে।

ঈশ্বরদী ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক এ বি এম শহিদুল ইসলাম জানান, ‘গত কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছিল। তবে আজ সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে।’ 

তিনি বলেন, ‘শতাধিক কর্মীকে প্রাথমিকভাবে ইপিজেড মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। গুরুতরদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।’

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ডায়রিয়ার রোগী। শুক্রবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে | ছবি: সংগৃহীত 

তার ভাষায়, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, খাবার পানির মাধ্যমেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তাই ২৪টি কারখানার পানি নমুনা ল্যাব টেস্টের জন্য আজই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।’ একই সঙ্গে সব কারখানা কর্তৃপক্ষকে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শনিবার দুপুরে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, বিছানা সংকটে অনেক রোগী হাসপাতালের মেঝে, বারান্দা, এমনকি সিঁড়িতেও চাদর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চারটি ওয়ার্ডই পূর্ণ। কোথাও খালি শয্যা নেই। ইপিজেডের এক নারী শ্রমিককে বারান্দায় ট্রে-সার (অস্থায়ী খাট) বিছিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁর স্বজনেরা জানান, তিনি প্রচণ্ড ব্যথায় ভুগছেন এবং কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে।

রেনেসাঁ কারখানার কর্মী মো. জাকিয়া বলেন, ‘সকালে ভর্তি হয়েছি, কিন্তু দুপুর পর্যন্ত কোনো শয্যা পাইনি। বাধ্য হয়ে বারান্দায় বসেই চিকিৎসা নিচ্ছি।’

নারী ওয়ার্ডে ভর্তি আয়েশা খাতুন বলেন, ‘রাতে হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হয়। পরে বারবার পাতলা পায়খানা হতে থাকে। একপর্যায়ে মাথা ঘুরে পড়ে যাই। পরিবারের লোকজন হাসপাতালে নিয়ে আসে।’

বেসরকারি জমজম স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা দুলাল হোসেন বলেন, ‘আমি দিনমজুর মানুষ। গতকাল দুপুরে বাইরে থেকে চটপটি খেয়ে এসেছিলাম। এরপর থেকেই শরীর খারাপ। এখন মাথা ঘোরে, দুর্বল লাগছে।’

একই ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন কলেজছাত্রী নাহিদা পারভীন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতে এক আত্মীয়ের বাসায় খাওয়া হয়েছিল। পরদিন সকাল থেকে পেট খারাপ। পরীক্ষা সামনে, এ অবস্থায় খুব চিন্তায় আছি।’

শহরের রেলগেটে অবস্থিত রূপসী বাংলা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শিমুল বিশ্বাস জানান, ‘ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই কিছু রোগী তাঁর ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসছেন। গত দুদিনে পাঁচজন রোগী ক্লিনিকে এসে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নিয়েছেন।’

ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আলী এহসান বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে যেহেতু অধিকাংশ রোগী ইপিজেড এলাকার, মনে হচ্ছে পানির মাধ্যমেই সংক্রমণ হয়েছে।’ তিনি জানান, বিষয়টি সিভিল সার্জনকে জানানো হয়েছে এবং ঢাকায় একটি মেডিকেল টিম পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

শয্যা সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যদিও অনেকে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, আমরা নিশ্চিত করছি যেন সবাই যথাযথ চিকিৎসা পান।