প্রতিনিধি ভোলা

গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্রাকগুলো আটক করে ভোলা সরকারি স্কুলের মাঠে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ভোলায় গ্যাস–সংযোগের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ইন্ট্রাকো কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার বহনকারী ১০টি ট্রাক আটকে দিয়েছেন। গতকাল রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ভোলা সরকারি স্কুল মোড়ে আন্দোলনকারীরা ট্রাকগুলো আটকে দেন। পরে ট্রাকগুলো ভোলা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ভোলায় উত্তোলিত গ্যাস বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে বোতলজাত করে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ নিয়ে ‘আমরা ভোলাবাসী’সহ বিভিন্ন সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আন্দোলনকারীদের দাবি, ভোলার গ্যাস দিয়ে ভোলায় কলকারখানা নির্মাণ করতে হবে, ভোলার মানুষের ঘরে ঘরে গ্যাস–সংযোগ দিতে হবে।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘরে ঘরে গ্যাস–সংযোগের দাবিতে গত শনিবার দুপুরে ভোলায় অবস্থিত ইন্ট্রাকো কোম্পানির রিফুইলিং স্টেশনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু পরদিন অর্থাৎ গতকাল আন্দোলনকারীদের বাধা উপেক্ষা করে ফটকের তালা ভেঙে ট্রাক ঢোকান ইন্ট্রাকোর লোকজন। পরে রাতের বেলায় সিলিন্ডারে গ্যাস নিয়ে ওই গাড়ি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। এ সময় আন্দোলনকারীরা সরকারি স্কুল মোড়ে গাড়িগুলো আটকে দেন। তাঁরা মানবপ্রাচীর হয়ে সড়ক অবরোধ করলে ট্রাকগুলো থেমে যায়। এরপর ১০টি ট্রাক সরকারি স্কুল মাঠে রাখা হয়েছে। দাবি না মানলে এগুলো যেতে দেওয়া হবে না।

ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাহাদাৎ মো. হাচনাইন পারভেজ বলেন, ট্রাকগুলো আন্দোলনকারীরা আটকে সরকারি স্কুল মাঠে রেখেছেন। তবে ইন্ট্রাকো কোম্পানির লোকজন তাঁদের কিছু জানাননি। তারপরেও পুলিশ নজর রেখেছে।

এদিকে আজ সোমবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জরুরি সভা করেছেন ‘আমরা ভোলাবাসী’ সংগঠনের নেতারা। এ সময় সাংবাদিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে নেতারা ‘ভোলার গ্যাস ভোলায় চাই, ঘরে ঘরে গ্যাস চাই’সহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

‘আমরা ভোলাবাসী’র আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম, মো. রাইসুল আলম, এনামুল হক, তরিকুল ইসলাম, সদস্যসচিব মীর মোশারেফ অমি প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, যত ধরনের ষড়যন্ত্র হোক, সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে ছয় দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ভোলার গ্যাস কোথাও নিতে দেওয়া হবে না। যদিও দাবিগুলো সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করা সম্ভব নয়, তবে এসব দাবি বাস্তবায়নের দৃশ্যমান কোনো কিছু না দেখা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

সদস্যসচিব মীর মোশারেফ বলেন, ‘ইন্ট্রাকো কোম্পানি বাধা উপেক্ষা করে রাতের বেলায় গ্যাস নিয়ে ভোলার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করে ভালো করেনি। এখন আমরা আরও কঠোর সিদ্ধান্ত নেব, যাতে ইন্ট্রাকোর ডিপোতে কোনো গ্যাস না পৌঁছায়, সে ব্যবস্থা করা হবে।’

ভোলার বাসিন্দাদের দাবি, ভোলার প্রতিটি ঘরে গ্যাসের সংযোগ দিতে হবে। ভোলার গ্যাস দিয়ে গ্যাসভিত্তিক বৃহৎ সার কারখানা স্থাপনসহ ভোলায় শিল্প, কলকারখানাসহ ইপিজেড গড়ে তুলতে হবে। এখানকার মানুষের চিকিৎসার সুবিধার্থে ভোলায় একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করতে হবে এবং যে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে, সেটির আধুনিকায়ন করতে হবে। দ্রুত ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে। বালু উত্তোলন বন্ধসহ ভোলার চারপাশের নদীতীর স্থায়ীভাবে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে এবং ভোলায় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।