প্রতিনিধি তারাগঞ্জ

কর্মব্যরত চিকিৎসকে মারধরের অভিযোগে তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছেন। শনিবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত অন্তঃসত্ত্বা এক চিকিৎসককে মারধরের প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করছেন চিকিৎসক ও কর্মচারীরা। আজ শনিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি চলছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।

তারাগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে তাহমিদ সরকার ওরফে তুর্য (২৪) ও তাওরাত (২৪) নামের দুজনের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওই চিকিৎসকের। এ ঘটনায় তিনি গতকাল শুক্রবার রাতে তারাগঞ্জ থানায় ওই দুই সমন্বয়কসহ অজ্ঞাত চার–পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন।

হাসপাতাল ও থানায় দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টায় দিকে কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা রাধারানী মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আতাউর রহমান বুকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। এ সময় চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান ওরফে মৌ (৩০) ওই রোগীকে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হিসেবে চিকিৎসাসেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। এরপর তিনি অন্য রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত হন। এ সময় আতাউর রহমানের ছেলে তাহমিদ সরকারসহ চার পাঁচজন চিকিৎসক মুসরাত জাহানকে গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে বাধা দেন। এ সময় ওই চিকিৎসকের শরীরে আঘাত করা হয়।

এ ঘটনায় তাহমিদ, তাওরাতসহ অজ্ঞাতনামা চার থেকে পাঁচজনের বিরুদ্ধে তারাগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত। পাশাপাশি এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ শনিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা অনির্বাণ মল্লিক জানান, চিকিৎসকের ওপর হামলাকারী বিচার ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে নিশ্চিত করার দাবিতে কর্মবিরতি চলছে।
রংপুর জেলা সিভিল সার্জন শাহীন সুলতানা বলেন, ‘চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনা শুনে হাসপাতালে এসেছি। রোগীদের যাতে দুর্ভোগ না হয়, সে জন্য চিকিৎসদের চিকিৎসাসেবা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছি।’

চিকিৎসক সাবরিনা মুসরাত জাহান বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই তাঁরা সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে আমার ওপর হামলা করেছে। আমার গায়ে হাত তুলেছে। রোগী আতাউর রহমানকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করি। আমি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এ ঘটনার পর শারীরিক ও মানসিকভাবে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েছি, নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া তাহমিদ সরকার বলেন, ‘আমি আসার আগেই আমার বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তিনি ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। ওই চিকিৎসককে আমার বাবাকে দেখার জন্য বারবার অনুরোধ করছিলাম। তিনি না শুনে উল্টো আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে একটু কথা–কাটাকাটি হয়েছে। গায়ে হাত দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে তাওরাত বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ ভুয়া। উনাকে তো আমরা মারিনি। শুধু হাসপাতাল বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলেছি। উনি আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন।’

এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।