[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

আশুলিয়ায় অস্থিরতা চলছে, গাজীপুরে আবার বিক্ষোভ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ। গাজীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি  ঢাকা, সাভার এবং গাজীপুর: তৈরি পোশাক খাতে চলমান অস্থিরতার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে সাভারের আশুলিয়ায় গতকাল মঙ্গলবারও ৭৪টি কারখানা বন্ধ অথবা ছুটি ঘোষণা করেছে মালিকপক্ষ। চার দিন পর গাজীপুরে আবার শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে গাজীপুর ও আশুলিয়ায় শতাধিক তৈরি পোশাক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।

হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ে গত ৩১ আগস্ট থেকে গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া কারখানায় নিয়োগে নারী ও পুরুষের সম অধিকার নিশ্চিতের দাবিতেও বিক্ষোভ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যানুযায়ী, সাভার-আশুলিয়ায় সাড়ে চার শ তৈরি পোশাক কারখানা আছে। তার মধ্যে গতকাল ৪২টি কারখানা অস্থিরতার কারণে বন্ধ ছিল। ১১টি কারখানার শ্রমিকেরা কাজে উপস্থিত হলেও বেরিয়ে যায়। এ ছাড়া ২১ কারখানার শ্রমিকেরা কাজ না করে কর্মবিরতি পালন করেন।

পরিস্থিতি শান্ত করতে প্রায় প্রতিদিনই বিজিএমইএর নেতারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আশুলিয়ার কারখানা মালিক ও শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে গত সোমবার ছয় ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক করে আশুলিয়া অঞ্চলের শ্রমিকদের হাজিরা বোনাস ২২৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া নারী ও পুরুষ নয়, দক্ষতার ভিত্তিতে শ্রমিক নিয়োগের বিষয়ে একমত হোন শ্রমিক ও মালিকপক্ষ। এসব সিদ্ধান্তের পরও গতকাল পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাল (বুধবার) অধিকাংশ কারখানা খুলবে। তবে কিছু কারখানা হয়তো বন্ধ থাকবে। শ্রমিকদের কাউন্সেলিং করাতে আরও ১-২ দিন সময় নিতে চাচ্ছেন কয়েকজন উদ্যোক্তা। আমরা আশাবাদী, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

শ্রমিকদের বিক্ষোভ চলছেই
ঢাকার সাভার-আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে গতকাল সকালে নির্ধারিত সময়ে অধিকাংশ কারখানা শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। তবে এসএম নিটওয়্যার, এপিএস নিট কম্পোজিট, স্বাধীন গার্মেন্টসসহ ১১ কারখানায় উপস্থিত হয়ে কাজ না করে বের হয়ে যান শ্রমিকেরা। এ ছাড়া শ্রমিকেরা কাজ না করায় মণ্ডল নিটওয়্যার, এআর জিনস প্রোডিউসার, হামজা ক্লথিং, শারমীন গ্রুপসহ ২১টি কারখানা ছুটি দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। যদিও কোনো ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাদেশ গামের্ন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন  বলেন, বিজিএমইএ থেকে হাজিরা বোনাস ও টিফিন বিল বৃদ্ধি, শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত না করা, নারী-পুরুষের বৈষম্য করা হবে না-এমন সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা খুবই ইতিবাচক। তবে কিছু কারখানা আগে থেকে বন্ধ রয়েছে। কিছু কারখানায় শ্রমিকেরা অভ্যন্তরীণ কিছু দাবিতে কাজ বন্ধ করে ভেতরে বসে আছেন। এসব দাবির বিষয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার মালিকপক্ষ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বেশির ভাগ কারখানায় শ্রমিকেরা কাজ করছেন। বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকেরা কর্মস্থলে উপস্থিত হলেও তাঁদের দাবি নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ার তাঁরা কাজ বন্ধ করে বসে আছেন। পরিস্থিতি শান্ত আছে।

বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুরের কয়েকটি এলাকায় পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা গতকাল সকাল থেকে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুরের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

শিল্প পুলিশ জানায়, গতকাল সকাল ৯টা থেকে টঙ্গীতে ১৩ দফা দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এমট্রানেট গ্রুপের শ্রমিকেরা। এ সময় তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন পিনাকি গ্রুপ, ড্রেস ম্যান ও নোমান গ্রুপের কয়েক হাজার শ্রমিক। বেলা আড়াইটার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারী শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের দাবি মেনে নেয়। এরপরও এমট্রানেট গ্রুপের কয়েকজন কর্মকর্তার পদত্যাগের দাবিতে বেলা তিনটা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা।

গাজীপুর সদর উপজেলার নতুন বাজার এলাকার এসএম নিটওয়্যারের শ্রমিকেরা গতকাল সকাল সাড়ে আটটায় কারখানায় ঢুকে হাজিরা বোনাসসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। পাশের অ্যাসরোটেক্সের শ্রমিকেরা দুপুর ১২টার দিকে কারখানার প্রধান ফটকে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর এসএম নিটওয়্যার ও অ্যাসরোটেক্সের শ্রমিকেরা অ্যাপারেল-২১ লিমিটেড ও গ্রিন ফাইবার কম্পোজিট লিমিটেড কারখানার ফটকে গেলে ওই দুটি কারখানাও ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

শ্রীপুরের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকার মেঘনা গ্রুপের হাই ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকেরা সকালে ১৪ দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। এ সময় পাশের হাউ আর ইউ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির শ্রমিকদের কারখানা থেকে বের করে আনতে গেলে হামলার শিকার হোন হাই ফ্যাশনের শ্রমিকেরা। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা হাউ আর ইউ টেক্সটাইলে ঢুকে ভাঙচুর করেন। তারপর কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হলে শ্রমিকেরা ফিরে যান।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশ-২-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, কয়েক দিন বিরতি দিয়ে হঠাৎ করেই বিভিন্ন দাবিতে গতকাল শ্রমিকেরা আবার বিক্ষোভ করেন। শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে ২৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনী, বিজিবির সঙ্গে মিলে পুলিশ কাজ করছে।

বেক্সিমকোর শ্রমিকদের বিক্ষোভ
বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুরে মহানগরে সারাবো এলাকার বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা গতকাল বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়ক অবরোধ করলে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

কারখানা শ্রমিক ও পুলিশ জানায়, সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বেশ কয়েকটি কারখানায় কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত কয়েক দিন ধরে শ্রমিকেরা গত মাসের বেতন-ভাতার দাবি করে আসছেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বেতন দেওয়ার কথা জানায় কারখানা কর্তৃপক্ষ। গতকাল সারা দিনে কিছু শ্রমিকের বেতন দেওয়া হলেও বেশির ভাগের হিসাবে অর্থ যায়নি। ফলে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শ্রমিকেরা কারখানার প্রধান ফটকের সামনে অবস্থানে নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা কারখানায় ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে তারা কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়ক অবরোধ করলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

রাত সাড়ে আটটায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন