[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

সরকারি আজিজুল হক কলেজে তীব্র আবাসনসংকটে নাকাল শিক্ষার্থীরা

প্রকাশঃ
অ+ অ-

সরকারি আজিজুল হক কলেজ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি বগুড়া:  বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। কিন্তু আবাসনের ব্যবস্থা আছে মাত্র ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে তিন থেকে চার গুণ বেশি টাকা খরচ করে বাইরের মেসে থাকতে হচ্ছে। তীব্র আবাসনসংকটের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর নাভিশ্বাস অবস্থা। বিশেষ করে বখাটেদের উৎপাতসহ নানা কারণে বাইরে থাকতে বেশি সমস্যায় ভুগছেন ছাত্রীরা।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রীদের জন্য পৌনে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ আসনের নতুন ছাত্রীনিবাস নির্মাণকাজ ছয় বছর আগে শেষ হয়েছে। কিন্ত সেটি এখনো চালু হয়নি। ২০০৯ সালে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে শের-ই-বাংলা, শহীদ তিতুমীর ও শহীদ আকতার আলী মুন হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর সেগুলো আর চালু করা হয়নি। 

কলেজের বেগম রোকেয়া আবাসিক হলে থাকেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী মেহেরুননেছা। তিনি বলেন, আবাসিক হলে থাকা-খাওয়ার জন্য একজন ছাত্রীর গড়ে প্রতি মাসে ১ হাজার ৬৬৬ টাকা খরচ হয়। অথচ মেসে থাকা ছাত্রীদের প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা গুনতে হয়। মেসে থাকার খরচ চালাতে না পেরে অনেক শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধের উপক্রম হয়েছে। অথচ ছাত্রীদের আবাসনসংকট সমাধানে কলেজ প্রশাসনের উদ্যোগ নেই। ২৫০ আসনের বেগম রোকেয়া হলে বর্তমানে ৪৫০ জনের বেশি ছাত্রী থাকছেন। 

কলেজের অধ্যক্ষ খোন্দকার কামাল হাসান বলেন, নতুন ছাত্রী হলের সামনের মাঠ ভরাটে বরাদ্দ মেলেনি। এ ছাড়া বর্তমানে নতুন ছাত্রী হল এবং ১০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক হলের লিফট চালুর জন্য ১ হাজার কেভিএ ক্ষমতার ট্রান্সফরমার প্রয়োজন। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ইতিমধ্যে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি ট্রান্সফরমার স্থাপনের দরপত্র আহ্বান করেছে। নতুন ট্রান্সফরমার স্থাপনের কাজ শেষ হলে ছাত্রীদের নতুন হল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২০১৫ সালে ছাত্রীদের জন্য ১০০ আসনের নতুন হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালের ১৮ জুন কলেজ কর্তৃপক্ষকে হল বুঝিয়ে দেয়। অথচ নতুন এই আবাসিক হল চালুর উদ্যোগ নেই। দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত পড়ে থাকায় হলের ভবনের রং, চুনকাম নষ্ট হয়ে গেছে। পানি সরবরাহ ও বিদ্যুতের সরঞ্জামও নষ্ট হওয়ার পথে। হলের কয়েকটি কক্ষ দখল করে কর্মচারীরা পরিবার নিয়ে বাস করছেন।

কামারগাড়ি এলাকার একটি মেসে থাকেন রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আশা খাতুন। তাঁর বাড়ি শেরপুর উপজেলায়। তিনি বলেন, নতুন হল চালু হলে ১৬৬ টাকা সিট ভাড়া দিয়ে এক মাস থাকা সম্ভব। অথচ মেসে ভাড়া গুনতে হচ্ছে প্রতি মাসে ২ হাজার টাকা।

আবাসনসংকটে দিশাহারা ছাত্ররাও। ১৫ বছর ধরে বন্ধ ছাত্রদের জন্য নির্মিত তিনটি আবাসিক হল। এর মধ্যে দুটি আবাসিক হল চালুর জন্য কয়েক বছর আগে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কারকাজ করা হলেও তা খুলে দেওয়া হয়নি। 

কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে শের-ই-বাংলা, শহীদ তিতুমীর ও শহীদ আকতার আলী মুন হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আকতার আলী মুন হলে ৯৬, শহীদ তিতুমীর হলে ৮০ এবং শের-ই-বাংলা হলে আসনসংখ্যা ৪০। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় এসব হলের আসবাব থেকে শুরু করে দরজা-জানালা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, পানির লাইনসহ সব মালামাল চুরি যায়। পরে শের-ই-বাংলা হল পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আকতার আলী মুন হল ও শহীদ তিতুমীর হল সংস্কারে কয়েক দফায় ১ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। শহীদ তিতুমীর হল সংস্কার শেষে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারও আগে ২০১৬ সালে হস্তান্তর করা হয় আকতার আলী মুন হল। কিন্তু আজও হল দুটি চালু হয়নি।

বাংলা বিভাগে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ঘোড়াঘাট উপজেলার ইমরান হোসেন বলেন, শিক্ষার্থী অনুপাতে হলের সংখ্যা অনেক কম। এতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে বাইরে মেসে থাকতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকার খরচের পাশাপাশি নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

কলেজ কার্যালয় সূত্র জানায়, কলেজে স্নাতকোত্তর, স্নাতক (সম্মান), স্নাতক এবং উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) শ্রেণির পাঠদান করা হয়। এর মধ্যে এইচএসসিতে ৩ হাজার, স্নাতকে ১ হাজার ৫০০, স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ২৩ বিভাগে ২০ হাজার এবং স্নাতকোত্তরে ৬ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। এইচএসসির ফলাফলে এই কলেজ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে বরাবরই ভালো করে আসছে। স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরের ফলেও সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছে। অথচ উত্তরাঞ্চলের এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসনের ব্যবস্থা নেই।

অধ্যক্ষ খোন্দকার কামাল হাসান বলেন, ছাত্রদের বন্ধ তিনটি হলের মধ্যে শের-ই-বাংলা হল অনেক আগেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ আকতার আলী মুন হল ও শহীদ তিতুমীর হলের সংস্কারকাজ শেষ হলেও ভর্তুকি দিয়ে আবাসিক হল চালানোর মতো তহবিল কলেজে নেই। এ কারণে ছাত্রদের হল চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আবাসনসংকট সমাধানের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন।

কলেজের শিক্ষক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বছরে উন্নয়ন ফি হিসেবে ৬০-৭০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৩০ লাখ টাকার ফি আদায় হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আবাসনসংকটে দুর্ভোগ পোহালেও নতুন ছাত্রাবাস বা ছাত্রীনিবাস নির্মাণের উদ্যোগ নেয় না প্রশাসন।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন