[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

শহরের আমবাগানের ছায়ায় মিলেমিশে কোরবানি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

আম গাছের ছায়াতলে কোরবানির ঈদ উদযাপন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাতেন খাঁ মোড় সংলগ্ন আমবাগানে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের চুনারীপাড়ার শতাধিক পরিবার একটি আমবাগানে যৌথভাবে কোরবানির ঈদ উদ্‌যাপন করল। মহল্লাটির বেশির ভাগ মানুষ নিম্ন আয়ের। নারী-পুরুষ মিলেমিশে কোরবানির কাজে অংশ নেওয়ার আনন্দে কোনো কমতি ছিল না। এ আনন্দের কেন্দ্রে ছিল শহরের বাতেন খাঁ মোড়সংলগ্ন একটি আমবাগান।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের চুনারীপাড়ায় অনেকের বাড়িতে গরু রেখে দেখাশোনা করার মতো সুবিধা নেই। ফলে ঈদুল আজহার সময় স্থানীয়দের ভোগান্তির সীমা ছিল না। এ সমস্যার সমাধানে একটি উদ্যোগ নেন বাগানের তত্ত্বাবধায়ক মো. বাক্কার। বাগানের এক কোনায় তাঁর একটি চায়ের দোকানও আছে। তিনি জানান, বাগানের মালিক উদার মনের মানুষ, যৌথভাবে এক স্থানে গরু রেখে পাড়ার মানুষ মিলেমিশে কোরবানি দেওয়ায় চিন্তা মাথায় আসে। এতে কোরবানিকে উপলক্ষ করে আরও মজবুত হবে সৌহার্দ্য।

পশু রাখার জন্য বাগানের এক পাশে বাঁশের খুঁটির ওপর টানানো হয় ত্রিপল। নিচে আট-দশটি গরু রেখে দেখভাল করা হয়। পশুদের খাওয়ানো ও পাহারার জন্য লোক নিয়োগ দেওয়া হয় যৌথভাবে। আর কাজটি ছয় বছর ধরে করছেন বাক্কার।

মো. বাক্কার বলেন, পাড়ার বেশির ভাগ মানুষ স্বল্প আয়ের। এক গরুতে সাত ভাগে কোরবানি হয়। কিন্তু কারও বাড়িতে কোরবানির গরু রাখার জায়গা নেই। ছয় বছর আগে যৌথভাবে গরু রেখে ব্যবস্থাপনা প্রস্তাব দেওয়া হলে দারুণ উৎসাহ নিয়ে সাড়া দেন এলাকাবাসী। দল বেঁধে এগিয়ে আসেন যুবকেরা। হাতে হাত লাগিয়ে বাঁশের খুঁটি পুঁতে ত্রিপল টাঙানো হয়। কোরবানির পাঁচ-সাত দিন আগে থেকেই পাড়ার ছেলেদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। পাড়ার বউ-ঝি ও শিশুরা আসে গরু দেখতে। আর কোরবানির দিনে তো ছোটখাটো মেলার মতোই লোকসমাগম ঘটে।

আজ সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, কোরবানির পরপরই নারীরা মাংস কাটাকুটিতে ব্যস্ত। একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রী, বউ-শাশুড়ি, মা-মেয়ে, চাচি-খালা, ফুফু–ভাতিজি, ভাই-বোনসহ আত্মীয়স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে আমবাগান। কোরবানির কাজ করতে করতে হইহুল্লোড়, হাসিঠাট্টায় সময় কাটছে সবার।

পাড়ার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি কুতুবউদ্দিন বলেন, কোরবানিতে অংশ নেওয়া সবাই এক ভাগ মাংস জামাতে দান করে যায়। এখান থেকে গ্রামের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। দূরদূরান্তের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের লোকদেরও এসব মাংস দেওয়া হয়।

ডিহির বাগানে এক ত্রিপলের নিচে এবার ছিল ২০টি গরু। অংশ নিয়েছে শতাধিক পরিবার। বাগানে গিয়ে কথা হয় হাজি মো. বিশুর (৭৪) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘চার ছেলে ও চার বোহু (ছেলের স্ত্রী), এক মেয়ে ও বাড়িয়ালিকে (স্ত্রী) লিয়া কুরবানির কামে ভিড়্যাছি। খুবই ভাল্লাগছে। ৫২ বছর আগে গাঁ ছ্যাড়্যাছি। আমবাগানের ছায়ার ভিতরে কুরবানি দিতে মনে হোইছে ফের গাঁয়ে ফির‍্যা আইস্যাছি। এ লাইগ্যা হামি বক্কারকে ধন্যবাদ দিতে চাহি। আর অর সোথে যারা আছে, তারঘেও।’

কোরবানির গরুর মাংস কাটাকুটিতে ব্যস্ত বুলবুলি খাতুন (৫০) বলেন, ‘আমাদের এই দলে আছে আমার ছেলে, ছেলের বউ, বোন ও পাড়ার অন্যরা। সবাই মিলে আনন্দেই কাজ করছি।’ এই দলের দীপা খাতুন বলেন, ‘ছেলের বউকেও সঙ্গে এনেছি। তবে কাজে লাগাইনি। এবার দেখেশুনে যাক, সামনে বারে কাজে লাগাব। বউয়ের বয়স কম। তাই এবার কাজ থেকে ছাড় দিয়েছি।’

পরিবারের সবাই ঢাকায় ছেলের বাসায়। তাই নওগাঁ থেকে বন্ধুর বাড়ি এসেছেন জয়নাল আবেদিন। এই বাগানের পাশেই বন্ধুর বাড়ি। বাগানে এসে কোরবানির এই দৃশ্য দেখে তিনি বলেন, বহু বছর আগে শৈশবে গ্রামীণ পরিবেশে কোরবানি দেওয়ার দৃশ্য মনে ভেসে উঠল। এখানকার মানুষ কোরবানি উপলক্ষে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। বেড়াতে এসে এ দৃশ্য দেখে ভালোই লাগল।

মিহির বাগানের ছাউনিতে গরু রেখে কোরবানিতে কয়েক বছর থেকে অংশ নিয়ে আসছেন পাশের প্রফেসরপাড়ার ভাড়াটে স্কুলশিক্ষক মনোয়ারা খাতুন। তিনি বলেন, ‘মনে হয় নিজের গ্রামেই কোরবানিতে অংশ নিয়েছি। যত দিন এখানে আছি, বাক্কারদের সঙ্গেই কোরবানিতে অংশ নিব। তবে এবার আমার একটু মন খারাপ। কেননা আমি প্রতিবছর কুরবানিতে কাজ করে ক্লান্ত মানুষদের লেবু-পানির শরবত খাওয়ায়। আর এ কাজে সহযোগিতা করত পাশের এক প্রতিবেশী শিশু নওশিন (১২)। সে আমাকে বড় মা ডাকে। আমিও তাকে মেয়ের মতোই স্নেহ করি। এবারও মানুষকে শরবত খাইয়েছি। কিন্তু নওশিন না থাকায় তার অভাব অনুভব করছি। আর সবকিছুই ভালো লাগার বিষয়।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন