[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

‘বইন্যা আমাগে ঈদ নিয়া গ্যাছে’

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের সময় জলোচ্ছ্বাসে ঘরের মাটি ভেসে গেছে। খুঁটির সঙ্গে চৌকি বেঁধে সেখানেই শিশুসন্তানদের নিয়ে থাকছেন গৃহবধূ সামসুন্নাহার। আজ রোববার সকালে পটুয়াখালীর সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের মাটিভাঙ্গা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি পটুয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বেড়িবাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে সামসুন্নাহারের বসতঘরের জিনিসপত্র ভেসে গেছে। আরও ভেসে গেছে ঘরের মাটি। বসতঘরও হয়েছে বিধ্বস্ত। দুই সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও গৃহবধূ সামসুন্নাহার এখনো মাথা গোঁজার ঘরটি মেরামত করতে পারেননি।

সামসুন্নাহারের বাড়ি পটুয়াখালীর সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের পায়রা নদীর পাড়ে মাটিভাঙ্গা গ্রামে। তাঁর স্বামী মনির গাজী মাছ ধরে সংসার চালান। সাইফুল (১৪), লামিয়া (৭) ও রায়হান (৬)—এই তিন সন্তান নিয়ে বেড়িবাঁধের পাশে ছোট্ট ঘরে তাঁদের বসতি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সেই ঘর নড়বড়ে হয়ে পড়েছে।

রাত পোহালেই ঈদ। প্রতিবছর ঈদে কষ্ট করে হলেও ছোট সন্তানদের নতুন জামা ও বাড়িতে একটু সেমাই রান্নার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু এবার সেই ব্যবস্থা করতে পারেননি মনির গাজী ও সামসুন্নাহার দম্পতি। তাঁদের ঈদের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল।

শুধু সামসুন্নাহাররের পরিবার নয়, গ্রামের পায়রা নদীর পাড়ের বেড়িবাঁধসংলগ্ন এলাকার অর্ধশত পরিবারের মধ্যে ঈদের আনন্দ নেই। আজ রোববার সকালে সরেজমিনে মাটিভাঙ্গা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষত এখনো স্পষ্ট। চারপাশে ভেঙে পড়া গাছগুলো এখনো পড়ে আছে। সামসুন্নাহার ঘরে এখনো মাটি তুলতে পারেননি। ঘরের একটি চৌকি খুঁটির সঙ্গে বেঁধে সেখানেই থাকছেন তাঁরা।

সেখানে আলাপকালে সামসুন্নাহার বলেন, তাঁর স্বামী নদীতে মাছ ধরেন। দিন এনে দিন খেতেন তাঁরা। এখন নদীতে তেমন মাছও ধরা পড়ছে না। ঘর মেরামত করার টাকা নেই। সুদে টাকা আনতে সাহসও পাচ্ছেন না। বৃষ্টিতে ভিজবেন, তবু সুদে টাকা আনার ইচ্ছা নেই তাঁদের।

ঈদের বিষয়ে জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামসুন্নাহার বলেন, ‘বইন্যার পর সরকারি ১০ কেজি চাউল পাইছি, আর চাউল-ডাইল-আলু দিছে। এহন এক কেজি চাউল দিয়া সংসার চালাইতাছি। কী করুম, সংসার চালাইতেই কষ্ট, হের মধ্যে ঈদ করুম ক্যামনে, বইন্যা আমাগে ঈদ নিয়া গ্যাছে।’

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বসতঘরটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এই ঘরেই সন্তানদের নিয়ে দিন কাটছে মারুফা বেগমের। আজ রোববার সকালে পটুয়াখালীর সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের মাটিভাঙ্গা গ্রামে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

একই গ্রামের আলী আসগর (৪৫) দিনমজুরির কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী মাহিনুর বেগম (৩৫) ও তাঁদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে তাঁদের ঘরের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। সেই ঘরেই বসবাস করতে হচ্ছে তাঁদের। মাহিনুর বেগম বলেন, তাঁর দুই ছেলে বড়। মেয়ে তাসনিয়ার বয়স সাত বছর ও তানহির বয়স চার বছর। এই ঈদে ছেলেমেয়েদের নতুন পোশাক কিনে দিতে পারেননি। ঘূর্ণিঝড় রিমালে বসতঘর ভেঙে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে ঘরের অনেক মালামাল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে এই ঈদে তাঁদের কোনো আনন্দ নেই।

পায়রা নদীর তীরে বসতঘর ছত্তার মোল্লার (৪৫)। রিমালের আঘাতের সময় জলোচ্ছ্বাসে তাঁর ঘর প্লাবিত হয়েছে। স্ত্রী হালিমা বেগম জলোচ্ছ্বাসের পানি ভেঙে অন্যের বাড়িতে ঠাঁই নেন। ছাত্তার বলেন, তাঁর বাড়ি ছিল একই ইউনিয়নের ফুলতলা গ্রামে। সিডরে তাঁর বসতঘরসহ জায়গাজমি পায়রায় বিলীন হয়ে গেছে। এখন মাটিভাঙ্গা গ্রামে নদীর পাড়ে তাঁর ঘর। ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর তিনি কোনো সাহায্য পাননি। তাঁর তিন ছেলে। কৃষিকাজ করে সংসার চলে তাঁর। কিন্তু রিমালের আঘাতে সব তছনছ হয়ে গেছে।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আলমগীর হোসেন হাওলাদার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলেই তাঁদের এলাকা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পায়রা নদীর পাড়ে এবং বেড়িবাঁধ উপচে পানিতে প্লাবিত হয় মাটিভাঙ্গা গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলো। এবারও ঘূর্ণিঝড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাই গরিব। তাঁদের ১০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন