[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বর্ষা মৌসুমে দেশে এবার বৃষ্টি বেশি হতে পারে

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ইফতেখার মাহমুদ: দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর আবহাওয়াবিদেরা বিগত দুই দিন ভারতের পুনে শহরে একটি সম্মেলনে রয়েছেন। সম্মেলনে এ অঞ্চলে চলতি মৌসুমের প্রচণ্ড গরম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনার মূল বিষয় ছিল আসন্ন বর্ষা মৌসুম (জুন-সেপ্টেম্বর)।

সম্মেলনে আগামী মাসগুলোর আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে এ অঞ্চলের শীর্ষ আবহাওয়াবিদেরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটি প্রাথমিক মতামত হাজির করেছেন। সেটি হলো, এবার বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের জন্য খবর হলো, এ দেশে বর্ষায় বৃষ্টি যেমন বেশি হবে, তেমনি বাংলাদেশের উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতেও বৃষ্টি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বর্ষায় বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা আছে।

ভারতের পুনেতে সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট আউটলুক ফোরামের ২৮তম এ অধিবেশন চলছে। এটি গত সোমবার শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে কারিগরি অধিবেশন শেষে বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়া পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে, তা নিয়ে একটি বিবৃতি প্রচার করা হয়।

সভায় বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এ অঞ্চলের আবহাওয়া থেকে ‘এল নিনো’ দুর্বল হয়েছে, ‘লা নিনা’ সক্রিয় হয়েছে। মানে হলো, শিগগিরই এই অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হবে।

বিশেষজ্ঞরা বিগত দুই বছরের মতো এবারও দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে যে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তার প্রধান কারণ হিসেবে এল নিনো নামে আবহাওয়ার এক বিশেষ অবস্থাকে দায়ী করেছেন। এল নিনো সক্রিয় হলে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি শুষ্ক রেখা তৈরি হয়। এর উল্টো অবস্থা হলো লা নিনা। এটি তৈরির সময় শুষ্ক রেখাটি উষ্ণ রেখায় পরিণত হয়। এতে বাতাসে জলীয় বাষ্প বেড়ে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি বেড়ে যায়।

ভারতে আবহাওয়াবিদদের সম্মেলনের পর যে বিবৃতি প্রচার করা হয়, তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে এবার বর্ষা শক্তিশালী হয়ে উঠবে। বাংলাদেশের তাপপ্রবাহের এলাকাগুলোতে এবার বৃষ্টিও বেশি হবে। সিলেট ও চট্টগ্রামে এবার তাপপ্রবাহের দাপট কম ছিল। সেখানে এবার বৃষ্টিও কম হতে পারে।

ভারতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ। তিনি সেখান থেকে মুঠোফোনে বলেন, সম্মেলনে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল আগামী বর্ষা মৌসুম। আবহাওয়াবিদেরা তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এবারের বর্ষায় বৃষ্টি বেশি হবে।

বাংলাদেশের উজানে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো, অর্থাৎ আসাম, মেঘালয়, পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে বৃষ্টি বেশি হতে পারে বলে ভারতে হওয়া সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন আবহাওয়াবিদেরা। ওই বৃষ্টি বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়বে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ মধ্যাঞ্চলে প্রতিবছর যে বন্যা হয়, তা এবার আরও ব্যাপক রূপ নিতে পারে।

এদিকে বাংলাদেশ সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে গতকাল মে মাসের প্রথম সপ্তাহের জন্য বন্যার একটি পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উজানে তো বটেই, সিলেট বিভাগজুড়ে আগামী সাত দিনের মধ্যে বৃষ্টি শুরু হবে। এতে সুরমা নদীর পাঁচটি পয়েন্টে বন্যা শুরু হতে পারে। তবে তা বেশি দিন স্থায়ী হবে না।

বাংলাদেশের মানুষ ৭৬ বছরের মধ্যে এবার এপ্রিল মাসে সবচেয়ে বেশি দিন টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে কাটিয়েছেন। অবশ্য আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ২ মে, অর্থাৎ আগামীকাল শুক্রবার বৃষ্টি শুরু হতে পারে। সেটা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে। রাজধানীতে বৃষ্টির জন্য চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকা মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কয়েক দিন। তারপর বর্ষাজুড়ে বেশি বৃষ্টি জলাবদ্ধতার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ চৌধুরী বলেন, গত কয়েক বছর এল নিনো অনেক শক্তিশালী ছিল। তীব্র তাপপ্রবাহের এটি একটি বড় কারণ। লা নিনা হলে বৃষ্টি বেড়ে বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বন্যা হয়। তিনি বলেন, ‘১৯৯৭ ও ১৯৯৮ সালে আমরা এ ধরনের পরিস্থিতি দেখেছিলাম। ১৯৯৭ সালে এল নিনোর কারণে টানা তাপপ্রবাহ ও খরা হয়, পরের বছর বেশি বৃষ্টির কারণে বড় বন্যা হয়।’

অধ্যাপক রাশেদ চৌধুরী আরও বলেন, এবার বাংলাদেশে কী পরিস্থিতি হবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে হবে।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন