[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

হুমকি দিয়ে হামলা চালাল পুলিশ, পিঠমোড়া করে বেঁধে নেওয়া হলো শিক্ষার্থীদের

প্রকাশঃ
অ+ অ-

লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাস থেকে গতকাল বুধবার ফিলিস্তিনপন্থী এক শিক্ষার্থীকে পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যায় পুলিশ | ছবি: রয়টার্স

পদ্মা ট্রিবিউন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (ইউসিএলএ) ক্যাম্পাসে তখন উত্তেজনা চরমে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে শত শত দাঙ্গা পুলিশ। আটকের পর পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁদের। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তখন বিক্ষোভকারীদের স্লোগান, ‘আমাদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাও।’

ইউসিএলএ ক্যাম্পাসের এই চিত্র স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাতের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী যে বিক্ষোভ চলছে, তারই ধারাবাহিকতায় ইউসিএলএ-ও নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে তাঁদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরায়েলপন্থী শিক্ষার্থীরা। এরপরই সেখানে পুলিশ অভিযান ও ধরপাকড় শুরু করে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাসে আটক করা হচ্ছে এক শিক্ষার্থীকে | ছবি: রয়টার্স
 
পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েও বিক্ষোভ থামাতে পারছে না। বরং ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, মিসরসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও।

ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে জড়ো হতে থাকে পুলিশ। সেখানে বিক্ষোভরত দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে হুঁশিয়ার করে বলা হয়—ক্যাম্পাস থেকে সরে না গেলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে। পরে গভীর রাত সোয়া তিনটার দিকে অভিযান শুরু করে পুলিশ। এ সময় তারা রাবার বুলেট ছোড়ে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে কত শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

ধরপাকড়ের সময় ছাতা ও হাতে তৈরি ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। তবে তা তেমন কাজে আসেনি। এ সময় ঘটনাস্থলে থাকা লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা জ্যাক বেডরোসিয়ান বলেন, সেখানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হচ্ছে। আর আজ (বুধবার) রাতে পাল্টা কোনো বিক্ষোভও হয়নি। তাই পুলিশ ডাকাটা নিন্দনীয় কাজ হয়েছে।

পুলিশের এই অভিযানের সমালোচনা করেছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের সিটি কন্ট্রোলার কেনেথ মেজিয়াও। বুধবার এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে বহিরাগতদের হামলার পর ইউসিএলএ ক্যাম্পাসে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের এখন পুলিশের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য আমরা ইউসিএলএ ও শহরের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তাঁদের আর ক্ষতি করবেন না।’
 
থামছেন না শিক্ষার্থীরা
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত উপত্যকাটিতে নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজার ৫৯৬ ফিলিস্তিনি। সেখানে খাবার, পানি ও চিকিৎসার সরঞ্জামের অভাবে দেখা দিয়েছে চরম মানবিক সংকট।

এরই মধ্যে সপ্তাহ দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের সূচনা হয় নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে। গত ১৮ এপ্রিল সেখান থেকে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এরপর বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
 
শিক্ষার্থীদের দিকে অস্ত্র উঁচিয়ে আছেন এক পুলিশ সদস্য | ছবি: রয়টার্স

বুধবার ইউসিএলএ ছাড়াও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে অন্তত ১৭ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এদিন নিউইয়র্কের ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটির একটি ভবন থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিয়ে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (এমআইটি) শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের কাছের একটি সড়ক অবরোধ করতে দেখা গেছে।

এর এক দিন আগে মঙ্গলবারেই নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটি ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে প্রায় ৩০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করেছিল পুলিশ। পুলিশের এমন পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ইসাবেলা বলেন, ‘আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। নিষ্ঠুরভাবে আটক করা হয়েছে। আমাকেও ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। বেশ আঘাত পেয়েছি। (শরীরে) কেটেও গেছে।’

ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা

মুঠোফোন উঁচিয়ে আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা | ছবি: এএফপি

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একদিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা, অপর দিকে ইহুদিবিরোধিতা ও বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্যের অভিযোগ সামাল দিতে হচ্ছে তাদের। ইসরায়েলের সমর্থক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনও একই পথে হাঁটছে বলেই মনে হচ্ছে।

যেমন হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব কারিন জ্যঁ-পিয়েরে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, খুবই স্বল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী সমস্যা ডেকে আনছেন। তাঁরা যদি বিক্ষোভ করতেই চান, তাহলে অন্যান্য মার্কিনের মতো আইন মেনে, শান্তিপূর্ণভাবে তা করার অধিকার তাঁদের রয়েছে।’

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের অবস্থান | ছবি: রয়টার্স

তবে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভাষ্যটা ভিন্ন। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পুলিশি ধরপাকড়ের প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন তিনি। উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যে এক শোভাযাত্রায় ট্রাম্প বলেছেন, ‘(ধরপাকড়) ঘটনাটি চোখ জুড়ানো ছিল। নিউইয়র্কের সেরা।’

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ দমনে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত (স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ার) ফ্রান্সেসকা আলবানিজ। বুধবার তিনি বলেন, একটি বিদেশি রাষ্ট্রের চালিয়ে যাওয়া গণহত্যার বিরুদ্ধে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চলমান বিক্ষোভ দমনে পুলিশের সহিংস পদক্ষেপে তিনি আতঙ্কিত।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন