[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ইন্টার্নদের ধর্মঘটের মধ্যে চিকিৎসক না পেয়ে রাজশাহী মেডিকেলে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশঃ
অ+ অ-

ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া মাহমুদুলের লাশের পাশে স্ত্রী সীমা বেগমের আহাজারি। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি রাজশাহী: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী পাবনার মাহমুদুল (৫৫)। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর লাশ পড়ে ছিল হাসপাতালের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায়। লাশের পাশে স্ত্রী সীমা বেগম আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ‘আমি ক্যাম্বা কইরে বুঝ দিব আমার পিচ্ছিডারে।’ বলতে বলতেই মেঝেতে শুয়ে পড়েন তিনি।

পায়ের কাছে বসে বিলাপ করছিলেন মাহমুদুলের মা নুরুন্নাহার। তিনি বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তখন চিকিৎসক ছিলেন না। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চিকিৎসক আসার কিছুক্ষণ পর তাঁর ছেলে মারা গেছেন। বারান্দায় অন্য রোগীর স্বজনেরা দাঁড়িয়ে তাঁদের আহাজারি দেখছিলেন। কেউ কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন।

ভাতা বৃদ্ধি ও কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ চার দফা দাবিতে পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ডাকা কর্মবিরতি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেও চলছে। এতে চার দিন ধরে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়ে কোনো ইন্টার্ন চিকিৎসককে পাওয়া যায়নি। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা না থাকলেও অন্য চিকিৎসকেরা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছেন। কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমবিবিএস শেষ করে রামেক হাসপাতালে ২১০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে ইন্টার্নশিপ করছেন। এ ছাড়া আগেই এমবিবিএস শেষ করে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ না করা আরও প্রায় ৬০ চিকিৎসক এফসিপিএস ও এমডিএমএস কোর্স করছেন। তাঁরা সবাই গত রোববার থেকে কর্মবিরতিতে আছেন।

১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় পড়ে থাকা মৃত মাহমুদুলের মা নুরুন্নাহার বারবার বলছিলেন, ‘রাজশাহীতে নিয়ে আইলাম ক্যা। এখন আমাগো বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা কইরে দেন।’ মাহমুদুল মারা যাওয়ার প্রায় আধা ঘণ্টা পর দুজন নার্স ইসিজি মেশিন নিয়ে আসেন। তাঁরা বলেন, ‘মুখের কথায় তো আর যাওয়া যাবে না। কাগজ দেখাতে হবে। এখন কাগজ বের করতে হবে। ওনার হাতটা বের করে দেন।’ স্ত্রী সীমা বেগম চাদরের ভেতর থেকে মৃত স্বামীর দুই হাত বের করে দিলেন। তারপর ইসিজি করা হলো। একজন নার্স বলছিলেন, ‘এটা ভাগ্যে আছে তাই। তা ছাড়া ডায়রিয়ায় আজ আর মানুষ মরে।’

মাহমুদুলের লাশের পাশেই হা করে পড়ে ছিলেন রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার রহিমাপুর গ্রামের মমতাজ উদ্দিন (৫৫)। তাঁর সঙ্গে বসে ছিলেন পুত্রবধূ রোকসানা বেগম ও মেয়ের স্বামী রফিকুল ইসলাম। রোকসানা বলেন, তাঁর শ্বশুর স্ট্রোক করেছেন। গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে এই হাসপাতালে এনেছেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত তাঁকে কোনো চিকিৎসক দেখেননি। রফিকুল ইসলাম বলেন, পাশেই দুজন রোগী মারা গেলেন শুধু সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে। এখানে ফেলে রেখে তাঁদের রোগীর শুধু শুধু ক্ষতি করা হচ্ছে। তাঁদের হয়তো এখন প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে হবে।

২০ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় লিপি রানী রোগী নিয়ে বসে ছিলেন। তাঁর রোগীকে ডায়ালাইসিস করাতে হবে। তিনি বলেন, ‘গতকাল কী বাজে অবস্থা গেল। আমাদের পাশ থেকে একজন রোগী মারা গেল শুধু ডাক্তার না পেয়ে।’ তাঁর সঙ্গে থাকা আরেক ব্যক্তি বলেন, হাসপাতালে থাকতে এসব কথা কাউকে বলা যাবে না।

চিকিৎসক না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘এসব অভিযোগ ঠিক নয়। আমাদের মিড লেভেলের ডাক্তাররা রাত ও দিন পরিশ্রম করছেন। এত বড় হাসপাতাল, রোগী তো মারা যাবেই। আমাদের তো রোগীর কাছে যাওয়ার সময় দিতে হবে।’

হাসপাতালের পরিচালক জানান, আজ রামেকে ১ হাজার ২০০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি আছেন ২ হাজার ৪৯৮ জন। গতকাল নতুন ভর্তি হন ৭৯০ রোগী। এর মধ্যে মারা যান ৩৪ জন। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে রোগীর সুস্থতার হার ৯৮ শতাংশ। মারা যায় ২ শতাংশের কম। বহির্বিভাগে প্রায় সাত হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। ৩০ থেকে ৪০ জনের মৃত্যু স্বাভাবিক।’ ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই ধর্মঘট কেন্দ্রীয়ভাবে হচ্ছে। ওদের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ঘোষণা রয়েছে। তারপরও আমি তাদের সঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে বসব। আলোচনা করব, গাইড করব।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন