[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

নাটোরে দেনমোহর হিসেবে বিয়েতে সুকৃতি নিলেন গাছের চারা

প্রকাশঃ
অ+ অ-


রোপণ করা গাছের চারায় পানি দিচ্ছেন নবদম্পতি। আজ মঙ্গলবার সকালে নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনসংলগ্ন এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

প্রতিনিধি নাটোর: বিয়েবাড়িতে সবাই যখন নানা পদের খানাপিনা ও হইহুল্লোড়ে ব্যস্ত, বর-কনে তখন রোপণ করছিলেন গাছ। এ গাছই যে তাঁদের সম্পর্কের সেতুবন্ধন। বিয়ের অত্যাবশ্যকীয় অনুষঙ্গ ‘দেনমোহর’ বাবদ কনের হাতে বর তুলে দিয়েছেন ছয়টি ফলদ ও বনজ গাছের চারা। আর তাতেই মহাখুশি বর-কনে দুজনেই।

ব্যতিক্রমী এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া উত্তরা গণভবনসংলগ্ন এলাকায়। গত শুক্রবার কনের বাবা এম আসলাম লিটনের বাড়িতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়। আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি ফেসবুকে মেয়ে-জামাতার জন্য আশীর্বাদ চেয়ে পোস্ট দেওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়।

আজ সকালে সংস্কৃতিকর্মী এম আসলাম লিটনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় রোপণ করা হয়েছে আম, লিচু, মেহগনি ও অর্জুনগাছের ছয়টি চারা। তাঁর মেয়ে সুকৃতি আদিত্য ও জামাতা নাবিন আদনান বাড়িতেই আছেন। তাঁরা চারাগুলোর পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত। হাসিমুখে দুজন মিলেই গাছে পানি দিচ্ছেন। নিরাপত্তার জন্য দিচ্ছেন বেড়া। অতিথি ও স্বজনদের আনাগোনায় বাড়ির ভেতরটা এখনো জমজমাট। এর মাঝেই কথা হয় বর-কনের সঙ্গে।

বিয়ের আসরে বর নাবিন আদনান ও কনে সুকৃতি আদিত্য | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

দের মুখ থেকেই জানা গেল, সুকৃতি আদিত্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স এবং কুমিল্লার বাসিন্দা নাবিন আনদান একই অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। নাবিন এখন ঢাকায় শিল্পনির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন। বছর ছয়েক আগে তাঁরা পূর্বপরিচয় থেকে ভালোবাসার বন্ধনে জড়ান। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে সুকৃতি-নাবিন পরস্পর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।

সুকৃতি আদিত্য বলেন, বিয়েতে দেনমোহর নিয়ে তাঁর তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না। তবে মুসলমানদের বিয়ের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ এটি। তাই নগদ অর্থ বা গয়না নিয়ে তিনি দেনমোহর উশুল করতে চাননি। বরং এমন কিছু নিতে চেয়েছেন, যা অনেক দিন তাঁদের বন্ধনের প্রতীক হয়ে টিকে থাকবে। গাছের চেয়ে ভালো ‘প্রতীক’ আর কিছু হতে পারে না। তাই তিনি মোহরানা হিসেবে ছয়টি গাছ চেয়েছিলেন। তাঁর বর তাঁকে সেটাই দিয়েছেন। তিনি তাতেই ভীষণ খুশি। সুকৃতি বলেন, ‘আমাদের দুজনের পরিচর্যায় গাছগুলো বেড়ে উঠবে। এ গাছ থেকে অনেক অক্সিজেন বাতাসে মিশবে। পরিবেশ সমৃদ্ধ হবে। পাশাপাশি আমাদের সম্পর্কও আরও মজবুত হবে।’

নাবিন আদনান বলেন, ‘উপহার হিসেবে তাঁর হাতে গাছ তুলে দিতে পেরে আমিও খুশি। আমি নিজেও গাছ লাগাতে পছন্দ করি। আমাদের ভালোবাসা গাছের মাধ্যমে অক্সিজেনের বেশে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে যাবে। এর চেয়ে আর খুশির বিষয় কী হতে পারে!’

কনের বাবা এম আসলাম লিটন বলেন, মোহরানা হিসেবে জামাতা গাছকে বেছে নেওয়ায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা অনেক খুশি হয়েছেন। গ্রামবাংলায় মেয়ের বাবা-মায়েরা নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অধিক দেনমোহর আদায়ের কথা ভাবেন। তাঁরা ভেবেছেন, এই গাছগুলো পরিবেশের নিরাপত্তা দেবে।

দিঘাপতিয়া অনার্স কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুর রাজ্জাক বলেন, বিয়েতে সুকৃতির মোহরানা হিসেবে গাছ উপহার নেওয়ার কথাটি জেনে আনন্দিত হয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর শহরের সবাই ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। নবদম্পতির জন্য শুভকামনা জানান তিনি।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন