মহান বিজয় দিবস আজ
![]() |
| জাতীয় পতাকা হাতে শিশুদের উচ্ছ্বাসে ভরে উঠেছে সবুজ মাঠ | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
আজ বাঙালির চিরগৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়েছিল। জাতি আজ যুদ্ধ জয়ের আনন্দ, গৌরব এবং বীর সন্তানের আত্মদানের বেদনা নিয়ে উদ্যাপন করছে ৫৫তম বিজয় দিবস।
ভোর থেকেই সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নামবে জনতার ঢল। সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা, মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষ ফুল নিয়ে উপস্থিত থাকবেন। সঙ্গে থাকবে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত লাল-সবুজ পতাকা।
রাজধানীর পাশাপাশি সারা দেশে আজ বিজয় দিবস উদ্যাপিত হবে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে। সরকারি ছুটি থাকবে।
ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালির উপর অবিচার, শোষণ ও বৈষম্য চলতে থাকে। মাতৃভাষা আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক সংরক্ষণ থেকে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদাররা নিরীহ বাঙালির ওপর ভয়ঙ্কর গণহত্যা চালায়, যা ইতিহাসে বিরল।
গণহত্যার পর বাঙালিরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেন এবং ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। এ পথে শহীদের রক্ত, মা-বোনের সম্ভ্রমের লঙ্ঘন ও বিপুল সম্পদহানি ছিল।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। তারা দেশের ও বিদেশে বসবাসরত সকলকে বিজয়ে শুভেচ্ছা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে স্মরণ করেছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দিনটি আমাদের জাতীয় গৌরবের প্রতীক, স্বাধীনতার চূড়ান্ত সাফল্যের স্মারক। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক করার মাধ্যমে স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব। আমাদের জীবনে সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং ঐক্যের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা ছিল না, অর্থনৈতিক মুক্তি ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাও ছিল উদ্দেশ্য। বিগত পাঁচ দশকের পথচলায় পূর্ণ রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক মুক্তি এখনো অর্জিত হয়নি। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নতুন আশা জাগিয়েছে।’
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিজয় দিবস হোক নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে জনগণের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে নবযাত্রা রক্ষার শপথ নেওয়ার দিন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার সূর্য উদিত হয়েছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আবারও একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ দিয়েছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের জনগণের অংশগ্রহণে উন্নত ও সুশাসিত বাংলাদেশের ভিত্তি গড়ে তুলেছে।’
প্রধান উপদেষ্টা সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন, নতুন প্রজন্মের জন্য নিরাপদ, সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে হাত ধরে এগিয়ে চলুন।
সরকারি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনি, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন নিজ নিজ কর্মসূচি পালন করবে।

Comments
Comments