চুয়াডাঙ্গায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
| হাড় কাঁপানো শীত আর ঘন কুয়াশার মধ্যে ছুটছেন কাজে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে আটটায় চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের ঘোড়ামারা এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চুয়াডাঙ্গায় আজ শুক্রবার সকাল থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ।
পর্যবেক্ষক জাহিদুল হক জানান, এটিই চলতি মৌসুমে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার একই সময়ে তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি, এক দিনের ব্যবধানে ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি কমেছে।
শৈত্যপ্রবাহ শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে শীতার্ত মানুষের জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল পর্যন্ত যানবাহন চলাচলের জন্য হেডলাইট জ্বালিয়ে যেতে হয়। চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকাগামী চালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪০ বছর গাড়ি চালাচ্ছি। এবার কুয়াশা একটু বেশি। রাতের বেলা ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে, সময়মতো পৌঁছানো কঠিন। দিনে দিন যত বাড়ছে, শীত আর কুয়াশার জন্য কষ্ট বাড়ছে।’
সড়কের পাশে বসে রোদ পোহাচ্ছিলেন ৮০ বছর বয়সী জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘এতো শীত, মানুষ কীভাবে বাঁচবে? পাতলা কাপড় গায়ে রাতের ঘুম আসে না। রোদও ঠিকমতো বের হয় না। শীতে খুব কষ্ট পাচ্ছি। শুনেছি সরকার কোম্বল দিচ্ছে, আমাদের কি পৌঁছাবে জানি না।’
শীতের কারণে জ্বর, কাশি ও ডায়রিয়া সহ নানা রোগের প্রকোপ বেড়ে গেছে। ৭৫ বছর বয়সী রাশিয়া বেগম জানান, ‘কয়দিন ধরে জ্বর। শীতে বাঁচাও কঠিন হয়ে গেছে। গরম কাপড়ও নেই যে শীত ঠেকাবে।’
কৃষি শ্রমিক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বাড়ি থেকে ১৬ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে চুয়াডাঙ্গায় আসলেও বেশির ভাগ দিনই কাজ নেই।’ তাঁর সহকর্মী আশরাফুল যোগ করেন, ‘দিন যত যাচ্ছে শীত বাড়ছে। হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। কুয়াশার মধ্যে এতদূর আসার পর কাজ না হলে খুব কষ্ট হয়।’
চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশন সংলগ্ন মাছের আড়তে ভোর থেকে বেচাকেনা শুরু হয়। শ্রমিকরা ঠান্ডায় পানি নেড়ে মাছ রাখে। স্থানীয় কর্মচারী মোরশেদ আলী বলেন, ‘ভোর থেকে ১০টা পর্যন্ত ঠান্ডা পানি নেড়ে মাছ রাখছি। ঠান্ডায় শরীর জমে যায়, সত্যি কষ্ট হয়।’
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাপমাত্রা ৯–১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে। ২৯ ডিসেম্বর থেকে আবার নামতে শুরু করবে। কুয়াশা অব্যাহত থাকবে।
জেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে শীতার্তদের জন্য গরম কাপড় ও কম্বল বিতরণ শুরু হলেও চাহিদার তুলনায় খুবই কম। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৫ হাজার শীতার্ত মানুষের মাঝে গরম কাপড় বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ ধারা অব্যাহত থাকবে।’
Comments
Comments