ডেইলি স্টার-প্রথম আলোয় হামলা: ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত ৩১, গ্রেপ্তার ১৭
![]() |
| গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে এই ১৬ জনের ছবি দিয়েছে পুলিশ | ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে |
দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সহিংসতা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। তথ্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম।
নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অন্তত ৩১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে থানা পুলিশ ১৩ জন, কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ৩ জন এবং গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
থানা পুলিশের গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন: মোহাম্মদ নাইম, মোহাম্মদ আকাশ, আহমেদ সাগর, মো. আবদুল আহাদ, মো. নজরুল ইসলাম (মিনহাজ), মো. জাহাঙ্গীর, মোহাম্মদ সোহেল রানা, মো. আবদুল বারেক শেখ (আল আমিন), রাশেদুল ইসলাম, সোহেল রানা ও শফিকুল ইসলাম।
সিটিটিসি গ্রেপ্তার করেছে মো. প্রান্ত শিকদার (ফয়সাল), আহমেদ প্রান্ত এবং আবুল কাসেম রাজু হোসাইনকে। ডিবি গ্রেপ্তার করেছে মো. সাইদুর রহমানকে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার নাইমের কাছ থেকে লুট করা নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এই টাকা দিয়ে তিনি একটি টিভি ও একটি টাচ ফ্রিজ কিনেছিলেন। এগুলো জব্দ করা হয়েছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, 'এসব ঘটনায় যাঁরা সরাসরি অংশ নিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই ভিডিও ফুটেজে ধরা পড়েছেন। আরও গ্রেপ্তার হবে।'
তিনি বলেন, প্রতিবাদ বা ক্ষোভ প্রকাশ এক বিষয়, আর অফিসে ঢুকে আগুন দেওয়া, ভাঙচুর করা সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। এসব কাজ অনাকাঙ্ক্ষিত ও ‘ব্যাড ইনটেনশন’ থেকে করা হয়েছে। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এক সাংবাদিক গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, “পুলিশ কোনো রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজছে না। হামলায় জড়িতরা দুষ্কৃতকারী, তারা আইন ভেঙেছে, আইন নিজের হাতে নিয়েছে। তাই জড়িতরা যে দলেরই হোক বা যে মতেরই হোক, দেশের আইনের মধ্যে বিচার হবে।”
তিনি আরও বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৪ ধারায় নির্দিষ্ট কিছু অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীকে ধরতে জনগণকে সহায়তা করার অধিকার রয়েছে। এজন্য শুধুমাত্র এই ঘটনাই নয়, অন্যান্য মামলার আসামিদের ক্ষেত্রেও এলাকাবাসীর তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।
নজরুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক পোস্টের মাধ্যমে সহিংসতা ছড়ানোর বিষয়েও বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে মুহূর্তের মধ্যে ভুল তথ্য ও উসকানি ছড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ এসব অপপ্রচারের মাধ্যমে সহিংসতা বাড়াচ্ছে।
হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তুলনামূলক কম জনবল নিয়ে কঠোর অভিযান করলে পুলিশ ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঝুঁকি তৈরি হতো। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় সর্বোচ্চ সংযম দেখানো হয়েছে। কোনো মানুষিক ক্ষতি হয়নি, এটাকেই তারা বড় অর্জন মনে করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৮ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি’র মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শাহবাগ মোড়ে লোকজন জড়ো হয়। তারা পরে কারওয়ান বাজারের দিকে চলে যায়। রাত আনুমানিক সোয়া ১১টা থেকে দিবাগত রাত ২টা-আড়াইটা পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে প্রথমে প্রথম আলো, পরে দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালানো হয়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি, রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
নজরুল ইসলাম জানান, প্রথম আলো ইতিমধ্যে মামলা করেছে। ডেইলি স্টারের মামলা প্রক্রিয়াধীন, এবং প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ চলছে।

Comments
Comments