[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ট্রাইব্যুনালে ডেকে আনার পর ক্ষমা চাইলেন জেড আই খান পান্না

প্রকাশঃ
অ+ অ-
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন | ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

গুমের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে এগিয়ে গিয়েও পিছু হটার ব্যাখ্যা দিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডাকা হলো জেড আই খান পান্নাকে। হাজির হয়ে তিনি আদালতের কাছে ক্ষমা চাইলেন। শুনানিতে কথা বলতে গিয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের ধমকও শুনতে হলো জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবীকে।

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) গুম করার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ অভিযোগ গঠনের শুনানিতে এসব ঘটনা ঘটে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে এই মামলা। পলাতক আসামি শেখ হাসিনার পক্ষে গত ২৩ নভেম্বর জেড আই খান পান্নাকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এই আইনজীবীও আওয়ামী লীগ সভাপতির পক্ষে দাঁড়াতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে জানান, রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে তিনি থাকতে চান না।

আজ মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন জেড আই খান পান্না উপস্থিত ছিলেন না। তা দেখে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হতে তিনি একসময় আগ্রহী ছিলেন, এখন কেন আগ্রহী নন? এটি গ্রহণযোগ্য নয়। ট্রাইব্যুনালের সামনে তাঁকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

জেড আই খান পান্নাকে গত ২৩ নভেম্বর রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। তিনি নিজেও শেখ হাসিনার পক্ষে মামলা লড়তে দাঁড়াতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি সিদ্ধান্ত বদলে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে চিঠি পাঠান।

আদালতে উপস্থিত চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম তখন বলেন, জেড আই খান পান্নার মক্কেল শেখ হাসিনা ট্রাইব্যুনালের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। এই কারণে তিনিও আগ্রহী নন। এটি আদালত অবমাননার শামিল।

এরপর ট্রাইব্যুনাল বলেন, জেড আই খান পান্নাকে ফোন করে এখনই আসতে বলুন অথবা কাউকে পাঠান। এছাড়া তিনি নির্দেশ দেন, জেড আই খান পান্নার চেম্বারে ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে পাঠানো হোক। চেম্বারে গিয়ে তাকে বলুক, যেন তিনি আদালতে আসেন।

কিছুক্ষণ পর হুইলচেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন জেড আই খান পান্না। তখন ট্রাইব্যুনাল তার শারীরিক অবস্থা জানতে চান। জবাবে জেড আই খান পান্না বলেন, তিনি সুস্থ নন। শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তিনি শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান না।

সরে দাঁড়ানোর আরও কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হওয়ায় তার অনুসারীরা তাঁকে আক্রমণ করছেন। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকেও আক্রমণ হচ্ছে। এই অবস্থায় তিনি ‘স্যান্ডউইচ’ হয়ে গেছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন | ফাইল ছবি
 
এরপর ট্রাইব্যুনাল অসন্তোষের সুরে বলেন, আসামি আসবে না, আপনারাও আসবেন না, যাদের নিয়োগ দেওয়া হবে, তাঁদের নিয়ে কথা বলা হবে।

এ পর্যায়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন জেড আই খান পান্না। এরপর ট্রাইব্যুনাল গুমের দুটি মামলায় জেড আই খান পান্নার পরিবর্তে মো. আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন।

আমির হোসেন আগে জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন। সেই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।

এদিকে শুনানিতে জেড আই খান পান্নার আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, তাঁর আসামি ট্রাইব্যুনালের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় বলে তিনি (পান্না) মামলা লড়বেন না, এটি আদালত অবমাননার সমতুল্য। আবার তিনি বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের হয়ে এই ট্রাইব্যুনালে লড়তে চান। পান্না ট্রাইব্যুনালকে বিষয়গুলো নিজের মতো ভাবছেন।

জেড আই খান পান্না সরে দাঁড়ানোয় ট্রাইব্যুনালে গুমের দুটি মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হলেন মো. আমির হোসেন। তিনি জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন। সেই মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়েছে।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, জেড আই খান পান্না বলতে পারেন না যে তার ‘ক্লায়েন্ট’ (শেখ হাসিনা) যা মানেন না, সে কারণে তিনি সেখানে যাবেন না। তিনি কি ট্রাইব্যুনালের চেয়ে ক্লায়েন্টকে (শেখ হাসিনা) বড় মনে করেন?

ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, জেড আই খান পান্না অসুস্থ হলে সেটা বিবেচনা করা হবে। বিচারক বা রায়কে সমালোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু আদালত মানবেন না বা আইন অমান্য করা যাবে, এটি আশা করা যায় না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে সংবিধান ‘আপার হেন্ড’ (ঊর্ধ্বতন ক্ষমতা) দিয়েছে।

এই পর্যায়ে জেড আই খান পান্না কিছু বলতে গেলে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল বলেন, ‘মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ’, অর্থাৎ যা খুশি তা বলা যাবে না।

জেড আই খান পান্না তখন বলেন, যা খুশি তা তিনি বলেননি।

ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, আইন অনুযায়ী কথা বলবেন। রাজনীতির মঞ্চে যা বলা যায়, তা আইনজীবী হিসেবে বলা যাবে না।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন