খালেদা জিয়া বিদেশে নেওয়ার মতো অবস্থায় কি না, দেখার পর তারেকের ফেরার সিদ্ধান্ত
| বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান | ফাইল ছবি |
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর তারেক রহমান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আরও বলেছেন, পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মির্জা ফখরুলকে উদ্ধৃত করে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনের একটি কমিউনিটি সেন্টারে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনা করে আয়োজিত দোয়া মাহফিলেও তিনি একই কথা বলেন।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ১০ দিন ধরে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। রোববার রাতে শারীরিক অবস্থার হঠাৎ অবনতি হওয়ায় তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রায় ৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই অবস্থা খারাপ হয়।
খালেদা জিয়াকে দেখতে আজ যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আসছেন বলে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন। তিনি দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা দেখবেন। দেখার পর যদি তিনি ট্রান্সফারেবল হন, যদি ট্রান্সফারের প্রয়োজন পড়ে, এবং যদি মেডিকেল বোর্ড মনে করে, তখন তাঁকে যথাযথভাবে চিকিৎসার জন্য বাইরে নেওয়া হবে।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য গত জানুয়ারিতেও খালেদা জিয়া লন্ডনে গিয়েছিলেন। প্রায় চার মাস লন্ডনে থাকার পর গত ৬ মে তিনি দেশে ফেরেন। লন্ডনে প্রথমে হাসপাতালে এবং পরে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
তারেক রহমান এক–এগারোর পর ২০০৮ সালে কারাগার থেকে বের হয়ে সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান। তারপর থেকে দেশে ফেরেননি। বিদেশে থেকেই দলের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল হওয়ায় দেশে ফেরার আলোচনা শুরু হয়। শিগগিরই ফিরবেন বলে কথা থাকলেও বিএনপির নেতারা সুনির্দিষ্ট দিন–তারিখ জানাচ্ছেন না।
এর মধ্যে খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেলে গত শুক্রবার শোনা গিয়েছিল, তারেক দ্রুত দেশে ফিরবেন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সময় গত শনিবার সকালে লন্ডন থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন তিনি। সেখানে লেখেন, ‘এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ–স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’
পোস্টে স্পষ্ট না করে তিনি আরও লেখেন, ‘স্পর্শকাতর বিষয়টির বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এ পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলে আমাদের পরিবার আশাবাদী।’
এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয়েছে, তারেক দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। গতকাল সোমবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, তারেক দেশে ফেরতে চাইলে এক দিনের মধ্যে তাঁকে ট্রাভেল পাস দেওয়া হবে। পরের দিনই তিনি দেশের পথে রওনা হতে পারবেন।
আজ সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তারেকের দেশে ফেরার পর নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশে কারও নিরাপত্তার ঝুঁকি বা শঙ্কা নেই। তিনি জানান, সরকার সবাইকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
Comments
Comments