নতুন তালিকায় ২৮ জনকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত
![]() |
| মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় |
অন্তর্বর্তী সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের পর এখন পর্যন্ত ২৮ জনকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগে এই ব্যক্তিরা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ছিলেন না। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) এখন তাদের নাম মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে গেজেটভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি সরকার ৩৩৬ জনের গেজেট বাতিল করতে যাচ্ছে, যারা আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন এবং নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন।
অন্যদিকে, নতুন মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াও চলছে। ইতিমধ্যেই ৮৪ জনের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জমা পড়া অভিযোগ ও আবেদন যাচাই–বাছাই এবং শুনানি শেষে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল এবং নতুন মুক্তিযোদ্ধার গেজেট করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই যাচাই–বাছাই ও শুনানি এখনও চলমান এবং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগবে।
তবে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রেণিবিন্যাসের কাজ শুরু হয়নি। কে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’, কে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’—এ বিষয়ে আলাদা গেজেটের কাজ এখনো শুরু হয়নি। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী এই শ্রেণিবিন্যাস শুরু করলে সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা বা বিভেদ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকায় সরকার আপাতত এ কাজ স্থগিত রেখেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তন করে ৩ জুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যাঁরা সরাসরি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন, শুধু তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। অন্যদিকে, যাঁরা দেশ–বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন বা বিশ্ব জনমত তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, তাঁরা থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী।
তবে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের পর ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে (এমআইএস) থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রেণিবিন্যাসের কাজ শুরু হয়নি। কারা হবেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’, কারা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’—এ নিয়ে আলাদা গেজেটের কাজ শুরু করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর আলাদা গেজেট করার কাজ জটিল, কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। এছাড়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গেলে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। তাই নতুন শ্রেণিবিন্যাসের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকার গ্রহণ করবে। তবে পরবর্তী সরকার এ সিদ্ধান্ত রাখবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে।
স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা এ পর্যন্ত পাঁচবার পরিবর্তন হয়েছে। এবারও এই বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর নতুন করে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ নামে আলাদা একটি শ্রেণি তৈরি করা ঠিক হয়নি। প্রস্তুতি ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও পরিচয় নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হতে পারে।
অন্যদিকে, অনেকে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। তাদের মতে, সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব, ভূমিকা ও অবদান অনুযায়ী শ্রেণিবিন্যাস করলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আরও স্পষ্ট হবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন স্বচ্ছ মানদণ্ড এবং সর্বসম্মত প্রক্রিয়া।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর আলাদা গেজেট করার কাজ বেশ জটিল, কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। তা ছাড়া তথ্য যাচাই-বাছাই করতে গেলে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
গত ২ নভেম্বর জামুকার ১০১তম সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের পৃথক তালিকা প্রকাশের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, আইন সংশোধন হলেও বর্তমানে সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন। সংশোধিত আইন অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের পৃথক গেজেট করা প্রয়োজন।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার), বীরাঙ্গনা এবং ফিল্ড হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীদের নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা গেজেট প্রকাশ করা হবে। এছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিক এবং স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে আলাদা গেজেট প্রকাশের বিষয়ে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এমন অনেক সনদ পেয়েছি, যাঁরা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। আমাদের কাজ শুধু কতজন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন, তা দেখা। বাকি সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার।
—উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
গেজেট বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় গত বছরের ৮ আগস্ট। এর প্রায় তিন মাস পর, ১৮ নভেম্বর, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনের ৫(১) ধারা অনুযায়ী ১১ সদস্যের জামুকা কাউন্সিল তিন বছরের জন্য পুনর্গঠন করা হয়। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই আজম। পুনর্গঠিত জামুকা গত এক বছরে ১১টি সভা করেছে।
এই ১১টি সভায় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে ২৮ জনের নাম গেজেটভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের নামে গেজেটও হয়েছে। এই ২৮ জনের নাম অতীতে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ছিল না।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্তির জন্য আদালতে রিট করেছিলেন। আদালত এসব রিট নিষ্পত্তির জন্য জামুকাকে নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদের আবেদন যাচাই–বাছাই ও শুনানি শেষে দেখা হয়, নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী তাঁরা হবেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী। আবার কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্তির জন্য সরাসরি আবেদন করেছেন। তাঁদের আবেদন যাচাই–বাছাই ও শুনানি শেষে দেখা হয়, তাঁরাও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী শ্রেণিতে পড়েন। এছাড়া, কেউ আছেন যাদের নাম মুক্তিবার্তা ও ভারতীয় তালিকায় আছে, কিন্তু গেজেটভুক্ত হননি। তাঁরা গেজেটভুক্তির জন্য আবেদন করলে শুনানি শেষে দেখা যায়, তাঁরাও হবেন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী।
এই ১১টি সভায় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে ২৮ জনের নাম গেজেটভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজনের নামে গেজেটও হয়েছে। এই ২৮ জনের নাম অতীতে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় ছিল না।
গেজেট বাতিলের সুপারিশ
নিজেদের বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে জামুকায় আবেদন করেছিলেন শত শত ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে ৬৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে না পারায় আবেদন নাকচ হয়ে গেছে। তবে জামুকার ১১টি সভায় ৮৪ জন নিজেদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। তাঁদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে জামুকা।
জামুকার তথ্যমতে, একই সময়ে গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে ৩৩৬ জনের জন্য। তাঁরা বিগত সময়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পেতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর শুনানি করা হয়। শুনানিতে তাঁরা কবে, কোথায়, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, এর পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম তাঁর দপ্তরে গত মঙ্গলবার জানিয়েছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের আলাদা শ্রেণিবিন্যাসের কাজ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয়ের যাঁরা এই কাজ করবেন, তাঁরা ৯ মাস ধরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য যাচাইয়ের কাজে ব্যস্ত। তাঁরা সেই তালিকা করছেন। এ কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রেণিবিন্যাসের কাজে সময় দেওয়া যাচ্ছে না। উপদেষ্টা মনে করিয়ে দেন, কোটা নিয়েই জুলাই আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল।
উপদেষ্টা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ বুদ্ধি দিয়ে, কেউ কূটনীতি দিয়ে, কেউ অস্ত্র দিয়ে, কেউ স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, কোনোটা কম নয়। এটি একটি বহুমুখী প্রচেষ্টার যুদ্ধ। সবকিছু এক করে আওয়ামী লীগ এত দিন ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করছিল। ফলে যুদ্ধের বৈচিত্র্য নানান ক্ষেত্রে মূল্য হারিয়েছে।’
নিজেদের বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে জামুকায় আবেদন করেছিলেন শত শত ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে ৬৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে না পারায় তাঁদের আবেদন নাকচ হয়ে গেছে। তবে জামুকার ১১টি সভায় ৮৪ জন নিজেদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। তাঁদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে জামুকা।
গেজেট বাতিল ও শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে চলমান পরিস্থিতি
নিজেদের বীর মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে জামুকায় আবেদন করেছিলেন শত শত ব্যক্তি। তাদের মধ্যে ৬৪৩ জন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে না পারায় আবেদন নাকচ হয়েছে। তবে জামুকার ১১টি সভায় ৮৪ জন নিজেদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছেন। তাঁদের নাম মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছে জামুকা।
একই সময়ে ৩৩৬ জনের গেজেট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁরা আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পেতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ আসার পর শুনানি হয়। শুনানিতে দেখা যায়, তারা কবে, কোথায়, কীভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তা যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের আলাদা শ্রেণিবিন্যাসের কাজ এখনও শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ৯ মাস ধরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়াদের তথ্য যাচাই করছেন। এ কারণে শ্রেণিবিন্যাসের কাজে সময় দেওয়া যাচ্ছে না। উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ বুদ্ধি দিয়ে, কেউ কূটনীতি দিয়ে, কেউ অস্ত্র দিয়ে, কেউ স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, সবই গুরুত্বপূর্ণ। সবকিছু এক করে দেখালে যুদ্ধের বৈচিত্র্য হারিয়ে যায়।’
শ্রেণিবিন্যাস কঠিন হওয়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের এমআইএসে বর্তমানে ২ লাখ ৬ হাজার ২৩১ জন মুক্তিযোদ্ধার তথ্য রয়েছে। ৩৪ ধরনের গেজেট আছে। লাল মুক্তিবার্তা তালিকায় ১ লাখ ৩২ হাজার নাম রয়েছে, যেখানে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়া ও সহযোগিতা করা উভয়ই আছে। এ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে আলাদা করা কঠিন। অন্য গেজেটেও একই সমস্যা।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা কমান্ডের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘আমি সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিই, আমার মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল। অন্য কেউ দেশে বা বাইরে বসে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর ঝুঁকি ছিল না। তাহলে দুজন সমান মুক্তিযোদ্ধা হবে কীভাবে? শ্রেণিবিন্যাস থাকা উচিত। তবে স্বাধীনতার এত বছর পর কাউকে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী ঘোষণা করলে সামাজিকভাবে হেয় হবেন।’
সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা ফোরামের সভাপতি এ এম শফিউর রহমান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী নামে আলাদা শ্রেণি করা ঠিক হয়নি। যুদ্ধে সবাই যায় না, কেউ কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে। এভাবে শ্রেণিবিন্যাস মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অবমাননাকর।’
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরির পরিস্থিতি
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কতজন নিয়োগ পেয়েছেন তা জানার জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তাদের পাঠানো তথ্যমতে, প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ৯০ হাজার ৫২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। এর মধ্যে ৭২ হাজার ৭৭ জনের তথ্য–উপাত্ত যাচাই করা হয়েছে। বাকি কর্মকর্তাদের যাচাই–বাছাই চলছে।
মুক্তিযোদ্ধা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, ‘আমরা অনেক সনদ পেয়েছি, যাঁরা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন। আমাদের কাজ শুধুই কতজন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন তা দেখার। বাকি সিদ্ধান্ত নেবে পরবর্তী সরকার।’

Comments
Comments