চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বিতর্কিত বক্তব্য, এবার পদোন্নতির দৌড়ে সেই কর্মকর্তা
![]() |
| জামায়াত নেতা সিরাজুল ইসলাম | ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া |
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি চাকরিতে যোগ দেন ২০০৬ সালের জুলাইয়ে। তখন তাঁর পদ ছিল নিম্নমান সহকারী, অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। পরে ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়ে ২০২২ সালে তিনি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হন। বর্তমানে তিনি সহকারী রেজিস্ট্রার পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন।
পদোন্নতির জন্য আবেদন করা ওই ব্যক্তির নাম সিরাজুল ইসলাম। সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষের ঘটনায় দেওয়া একটি ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের কারণে তিনি আলোচনায় আসেন। সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী–বায়েজিদ আংশিক) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ছিলেন। তবে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর জামায়াতে ইসলামী তাঁর মনোনয়ন বাতিল করে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিরাজুল ইসলাম হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার শুরা সদস্য। তিনি ১৯৯৪ সালে ডিপ্লোমা, ১৯৯৬ সালে স্নাতক (বিএ) এবং ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর (এমএ) পাস করেন। তবে তিনি নিজেকে ‘ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম’ নামে পরিচয় দিতেন। দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচির প্রচারপত্রেও এই নাম ব্যবহার করা হতো। আগামী বৃহস্পতিবার তাঁর পদোন্নতির সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা রয়েছে। সাক্ষাৎকার শেষে তিনি সেকশন অফিসার (নবম গ্রেড) পদ থেকে সহকারী রেজিস্ট্রার (ষষ্ঠ গ্রেড) পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায়।
শুধু সিরাজুল ইসলাম নন, তাঁর মতো আরও অন্তত ৫০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাঁরা বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। এসব পদের মধ্যে রয়েছে নিম্নমান সহকারী থেকে উচ্চমান সহকারী, উচ্চমান সহকারী থেকে সেকশন অফিসার এবং সহকারী রেজিস্ট্রার থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার। যদিও সিরাজুল ইসলাম ২০১০, ২০১৩ ও ২০২২ সালে মোট তিনবার পদোন্নতি পেয়েছেন।
চলতি বছরের ৩০ ও ৩১ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য, তৎকালীন প্রক্টরসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই ঘটনার পর ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের একাংশের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সিরাজুল ইসলামের দেওয়া বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা আমরা মেনে নেব না।’
এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। ওই দিন রাতেই গোলচত্বর, এ এফ রহমান হল এবং শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এর পরপরই জামায়াতে ইসলামী সিরাজুল ইসলামের প্রার্থিতা বাতিল করে এবং তাঁকে উপজেলা আমিরের পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে শোকজ করে।
নথিপত্র অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৬৪তম সিন্ডিকেট সভায় বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তালিকা যাচাই–বাছাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি ৫ নভেম্বর উপাচার্যের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে কারা পদোন্নতি পেতে পারেন, তা চূড়ান্ত করে। মূলত তাঁদেরই পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা হয়েছে। রোববার ও সোমবার এই সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে বুধবার ও বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করা হয়।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পাঁচবার সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর ষষ্ঠবারে তিনি পদোন্নতি পেয়েছিলেন। সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী আবারও পদোন্নতির আবেদন করেছেন। নিয়ম মেনেই তিনি সাক্ষাৎকার দেবেন। সংঘর্ষের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া শোকজের জবাবও তিনি দিয়েছেন। একই সঙ্গে দল থেকেও তাঁকে ওই ঘটনার পর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
পদোন্নতির নথি অনুযায়ী, সেকশন অফিসার থেকে সহকারী রেজিস্ট্রারে পদোন্নতির জন্য সিরাজুল ইসলামসহ চারজনের নাম রয়েছে। তাঁদের সাক্ষাৎকার নেবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার, সহ–উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী এবং আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মু. জাফর উল্লাহ তালুকদার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় সিরাজুল ইসলামের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল এবং তিনি তা দিয়েছেন। পদোন্নতির সাক্ষাৎকারে ডাকা মানেই পদোন্নতি নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে কোনো তদবিরও নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কারও তদবিরের তোয়াক্কা করে না।

Comments
Comments