চট্টগ্রামে ব্যস্ত সড়কের পাশে দিনদুপুরে অস্ত্র দেখিয়ে চাঁদা দাবি
![]() |
| অস্ত্র হাতে নির্মাণাধীন ভবনে ঢুকছেন সন্ত্রাসীরা | ছবি: ভিডিও থেকে |
চট্টগ্রামে দিনদুপুরে ব্যস্ত সড়কের পাশে নির্মাণাধীন ভবনের মালিকের কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেছে সন্ত্রাসীরা। গত রোববার বেলা একটার দিকে নগরের পাঁচলাইশের মুরাদপুর–অক্সিজেন সড়কের হামজারবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি আজ বুধবার রাতে জানাজানি হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এক মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, মুরাদপুর–অক্সিজেন সড়কের হামজারবাগ এলাকায় মো. মিজান ও জসিমের মালিকানাধীন একটি নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিকেরা কাজ করছিলেন। ওই সময় তিন যুবক সেখানে ঢোকেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের হাতে অস্ত্র ছিল। তাঁরা পরপর কয়েকটি গুলি ছোড়েন। এতে শ্রমিকেরা আতঙ্কে দৌড়ে সরে যান। পরে অস্ত্র হাতে নিয়ে সন্ত্রাসীদের ব্যস্ত সড়ক পার হয়ে চলে যেতে দেখা যায়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দিনদুপুরে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলির ঘটনা দেখে স্থানীয় একজন পুলিশ জরুরি সেবা ৯৯৯–এ ফোন করেন। খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানা–পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। তবে তার আগেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, হামজারবাগ এলাকায় মিজান ও জসিম নামের দুই ব্যক্তি বাড়ি নির্মাণ করছেন। তাঁদের কাছে বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর পরিচয় দিয়ে ৮০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না পেয়ে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছোড়ে। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় লোকজন জানান, একই এলাকার আমির হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম নামের আরও দুই ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের ভয়ে তাঁদের নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছেন। ঘটনার শিকার মিজান ও জসিমও ভয়ে মুখ খুলছেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ঘটনার পর পুলিশ গিয়ে কাউকে পায়নি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদের অনুসারী পরিচয় দিয়ে তারা চাঁদা দাবি করে আসছিল। ভুক্তভোগীদের মামলা করতে পরামর্শ দেওয়া হলেও তাঁরা থানায় আসেননি।
একই দিন রোববার রাত ১০টার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার বালুছড়া উত্তর কুলগাঁও এলাকায় চাঁদা দাবির প্রতিবাদ করায় ছাত্রদলের এক নেতার বাড়ি লক্ষ্য করে ১৫ থেকে ২০টি গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভুক্তভোগী আহমেদ রেজা নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক। বর্তমানে তিনি যুবদলের পদপ্রত্যাশী বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, চার যুবক অস্ত্র উঁচিয়ে একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে একের পর এক গুলি ছোড়েন। ১৫ থেকে ২০টি গুলি করার পর তাঁরা দ্রুত সরে যান। এ ঘটনাতেও ভুক্তভোগী ভয়ে থানায় মামলা করেননি। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বিদেশে পলাতক সাজ্জাদের অনুসারীরাই এতে জড়িত। তবে পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি।
গত ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম–৮ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগের সময় গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনি ও আরও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় ঘটনাস্থলে সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলা নিহত হন। এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ওই ঘটনার শুটারদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও প্রধান আসামিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এদিকে বড় সাজ্জাদের অনুসারী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ কারাগারে থাকলেও তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনীর তৎপরতা থেমে নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাহিনীর অন্তত অর্ধশত সদস্য খুন, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাজ্জাদের অনুপস্থিতিতে মোহাম্মদ রায়হান, মোবারক হোসেন ইমন, বোরহান উদ্দিন কাদের ও নাজিম বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

Comments
Comments