ডেইলি স্টারের ছাদে একদল সংবাদকর্মীর রুদ্ধশ্বাস ৩ ঘণ্টা
![]() |
| ক্রেনের মাধ্যমে ডেইলি স্টারের সাংবাদিকদের উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ওসমান হাদির মৃত্যুর খবরে ফার্মগেটে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর ছাদে আটকা পড়া এক সাংবাদিক তাঁর রুদ্ধশ্বাস অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে কারওয়ান বাজারে কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের পর উন্মত্ত জনতার একটি অংশ ডেইলি স্টার ভবনের দিকে এগোতে থাকলে বাইরে থেকে একজন ফোন করে তাঁদের বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে ডেইলি স্টারের বার্তা কক্ষে থাকা কর্মীরা নিচে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু ততক্ষণে ভবনের নিচে ‘মব’ এসে ভাঙচুর শুরু করে এবং এক পর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।এই অবস্থায় ধোঁয়ার মধ্যে নিচে নামা সম্ভব না হওয়ায় সংবাদকর্মীদের একটি অংশ দশ তলার ছাদে উঠে যান।
ওই সাংবাদিক জানান, সব মিলিয়ে ছাদে তাঁদের সংখ্যা ছিল ২৮ জন। সবাই তখন চরম উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর ভবনের ক্যান্টিন বয় সাহস করে ছাদ থেকে ভবনের বাইরের ফায়ার এক্সিটের মই বেয়ে নিচে নামেন। কিন্তু নামার পর তিনি মবের কবলে পড়েন এবং মারধরের শিকার হন। এই ঘটনা দেখে অন্য কেউ আর মই বেয়ে নামার সাহস পাননি। এক পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে নিচতলার আগুন নেভান। পরে চারজন ফায়ারম্যান ছাদে উঠে আটকা পড়া কর্মীদের নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু নিচে তখনও উন্মত্ত জনতার ভাঙচুর চলতে থাকায় কেউ নামতে সাহস করছিলেন না। এ কারণে ছাদের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সাহস দিয়ে বলেন, নিচে সেনাবাহিনী রয়েছে, ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হামলাকারীদের কয়েকজন ছাদে উঠে এসে দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তখন ছাদে থাকা ফায়ার সার্ভিসের চার কর্মীও ভড়কে যান। আটকা পড়া সংবাদকর্মীরা ছাদে থাকা টব জড়ো করে দরজা আটকে রাখার চেষ্টা করেন। সময় কাটতে থাকে চরম আতঙ্কের মধ্যে।
এক পর্যায়ে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউ এইজ সম্পাদক নূরুল কবীর এবং আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ডেইলি স্টার ভবনের নিচে এসে হামলাকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখানে নূরুল কবীর উল্টো হেনস্তার শিকার হন।
পরে ভবনের নিচে থাকা সেনা সদস্যরা কৌশলে এক পাশের সিঁড়ি ছেড়ে দেন। তখন হামলাকারীরা ওই পাশ দিয়ে উপরে উঠে ভাঙচুর ও লুটপাট শুরু করে।
এই সুযোগে ছাদে ও ভবনের ভেতরে আটকা পড়া ডেইলি স্টার কর্মীদের ফায়ার এক্সিটের সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে পেছন দিক দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। তখন ভোর পৌনে ৪টা বেজে গেছে।
ডেইলি স্টারের ওই সাংবাদিক বলেন, ‘কপাল ভালো, আজ বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছি। জানি না দেশ কোন দিকে যাচ্ছে।’

Comments
Comments