গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ
| ধর্ষণ | প্রতীকী ছবি |
চেতনানাশক খাইয়ে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগে ঢাকার সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী মামলাকারীর সহপাঠীসহ চার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি মেসে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সফিকুল ইসলাম সুমন জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই ছাত্রী ধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে চারজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। এ মামলার ভিত্তিতে বুধবার বিকেলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন, দেলোয়ার ভূঁইয়া (২৬), তাজুল ইসলাম তাজ (২৩), শ্রাবণ সাহা (২৩) ও অন্তু দেওয়ান (২৮)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পিকনিকে যাওয়ার কথা বলে বাদীকে তার সহপাঠী দেলোয়ার, তাজুল ইসলাম ও শ্রাবণ সাহা আশুলিয়ার ফুলের টেক এলাকায় নিয়ে যান। যাওয়ার পথে কোমল পানীয়ের সঙ্গে তাঁকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলানো হয়। বিকেলে জ্ঞান ফেরার পর তিনি নিজেকে ফুলের টেক এলাকায় দেলোয়ার, তাজুল ইসলাম ও শ্রাবণ সাহার মেসে দেখতে পান এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তা বুঝতে পারেন। এসময় জানতে পারেন, ওই তিনজন মুঠোফোনে ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছেন। বিষয়টি কাউকে জানালে বা আইনগত পদক্ষেপ নিলে ছবিও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, অ্যাসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। পরে বিভিন্ন সময়ে তারা ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় ৯৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ছবির ভয় দেখিয়ে তিন সহপাঠী ৪ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব দেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ওই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় আশুলিয়ার বাইশমাইল এলাকায় তাকে আটকান দেলোয়ার, তাজুল ও শ্রাবণ। তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র অন্তু দেওয়ান তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চান। প্রস্তাবে রাজি না হলে তিন সহপাঠী তাকে মারধরসহ জোর করে অন্তু দেওয়ানের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। একপর্যায়ে জোর করে বাদীকে নেশাজাতীয় পানীয় খাইয়ানো হয়। তবে তিনি কোনোমতে ছুটে এসে ক্যাম্পাসে পৌঁছে জ্ঞান হারান। পরে অন্য সহপাঠী ও শিক্ষকেরা তাকে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা খারাপ হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার পরপরই বাদীর পরিবারের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। চিকিৎসা শেষে ২৬ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে বাদী তার বিভাগের একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে সব আসামিকে দেখতে পান। তিনি কক্ষে প্রবেশ করতেই দরজা বন্ধ করে দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করতে বলেন আসামিরা। বাদী অস্বীকার করলে কক্ষে আটকে বড় ধরনের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।
বাদীর বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া অন্তু দেওয়ানের নেতৃত্বে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি মধ্যরাতে মেসে ডেকে এক শিক্ষার্থীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর অন্তু দেওয়ানসহ আট শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সভাপতি রফিকুল আলম জানান, ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা শুধু দেলোয়ারের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেছিলেন। পরে দেলোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন। এরপর ওই ছাত্রীর পরিবার বা ছাত্রী নিজে বিষয়টির ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাননি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন