[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

কুমিল্লায় শিক্ষক আন্দোলনে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
শিক্ষার্থীরা এসেছিল বার্ষিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য। কিন্তু বিদ্যালয়ে এসেই জানতে পারে শিক্ষকদের আন্দোলনে পরীক্ষা হচ্ছে না। তাই সহপাঠীদের সঙ্গে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আড্ডায় মেতেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে কুমিল্লা নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

কুমিল্লা নগরের নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার রাহি আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় বসার জন্য বিদ্যালয়ে আসে। তাদের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। সাড়ে ৯টার দিকে পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও, বিদ্যালয় পৌঁছানোর পর সাবেকুন নাহার জানতে পারেন, আজ পরীক্ষা হচ্ছে না। কারণ, শিক্ষকেরা চার দফা দাবির অংশ হিসেবে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতিতে রয়েছেন।

হতাশ হয়ে বাসায় ফেরার সময় সাবেকুন নাহার বলেন, ‘রাতে পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নিয়েছি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরও পড়াশোনা করেছি। কিন্তু স্কুলে এসে স্যাররা বললেন, আজ পরীক্ষা হবে না। তাই বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’

আজ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির কারণে অসংখ্য শিক্ষার্থী এমন বিড়ম্বনার মুখে পড়েছেন।

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করাসহ চার দফা দাবিতে আজ থেকে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি শুরু করেছেন। কর্মবিরতির অংশ হিসেবে চলমান বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। এ বছরের বার্ষিক পরীক্ষা ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়। রোববার ‘বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’ এই কর্মসূচি ঘোষণা করে।

মাধ্যমিক শিক্ষকদের চারটি দাবি হলো: সহকারী শিক্ষক পদকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট প্রকাশ করা; বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা; সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি দেওয়া; এবং ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের দুই থেকে তিনটি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন-সুবিধা বজায় রেখে গেজেট প্রকাশ করা।

কুমিল্লা জিলা স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২ হাজার এবং শিক্ষকের সংখ্যা ৫৩। আজ বেলা ১১টার দিকে স্কুলে প্রবেশ করলে দেখা যায়, সহকারী শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তবে বিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

চার দফা দাবিতে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন কুমিল্লা জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষকেরা। রোববার সকালে স্কুলের প্রশাসনিক ভবনের সামনে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষকরা বলেন, আজ সকালে ৮ম ও ১০ম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা ছিল। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে এসেছিল। কিন্তু শিক্ষকেরা তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছেন। তাই শিক্ষার্থীরা বাসায় ফিরে গেছে। বিকেলের শিফটে ৭ম ও ৯ম শ্রেণির পরীক্ষাও হওয়ার কথা থাকলেও তা আজ হচ্ছে না।

কুমিল্লা জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো দাবির জন্য আন্দোলন করছি না, আমাদের আন্দোলন আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য। অনেকে বলছেন, আমাদের আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা তো আমাদেরই সন্তান। সরকার যদি আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়, তাহলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে বাকি পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। আমরা ছুটির দিনেও কাজ করে ডিসেম্বরের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করব। কিন্তু দাবি পূরণ না হলে কর্মবিরতি চলবে।’

নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৮১ এবং শিক্ষকের সংখ্যা ৫১। আজ সকাল ৯টার দিকে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা অফিসকক্ষে বসে সময় কাটাচ্ছেন। বিদ্যালয় আঙিনায় পরীক্ষার্থীরা দলবেঁধে এসেছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এসে জেনেছে, আজ পরীক্ষা হবে না। পরীক্ষা না হওয়ায় তারা সহপাঠীর সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছে।

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেরীন আক্তার বলেন, ‘বার্ষিক পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম। বিদ্যালয়ে এসে স্যাররা বললেন, তাঁদের আন্দোলনের কারণে আজ পরীক্ষা হবে না। কাল বা পরশু পরীক্ষা হবে কি না, সেটাও এখনও নিশ্চিত নয়। স্যাররা বলেছেন, কবে পরীক্ষা হবে, সেটা পরে জানানো হবে। তাই বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামাল উদ্দীন বলেন, ‘আমাদের ৯ম গ্রেড দিলে সমস্যা সমাধান হবে। ১৯৭৭ সালে আমরা ১০ম গ্রেডে ছিলাম, এখনো একই গ্রেডে আছি। পিটিআই ইনস্ট্রাক্টর, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, সাব-রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্য শেষ হলেও আমাদের ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য চালু রয়েছে। আমরা এই বৈষম্য শেষ করতে চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের দাবিগুলো দ্রুত মেনে নেওয়ার। আমরা ক্লাসে ফিরতেও চাই।’

একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক মনির হোসেন বলেন, বার্ষিক পরীক্ষার সময় শিক্ষকদের এমন আন্দোলনে তিনি ক্ষুব্ধ। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে এখন দাবি আদায় করা হচ্ছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে নতুন বছরে তারা এই কর্মসূচি পালন করতেই পারতেন। হঠাৎ এমন আন্দোলনের প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায়।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন