শাহজালালে অগ্নিকাণ্ড: আসছে না রি-এজেন্ট, চমেকে বন্ধ ৩ পরীক্ষা
![]() |
| প্রতীকী ছবি |
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রাসায়নিক বিকারক (রি-এজেন্ট) সংকটের কারণে কিডনি ও ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগ নির্ণয়ের তিনটি বিশেষ পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ ধরে এসব পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। এছাড়া বেসরকারি পরীক্ষাগারে এই পরীক্ষা করা সম্ভব নয়, ফলে রোগী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা সমস্যায় পড়েছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পণ্য রাখার কমপ্লেক্সে আগুন লাগার পর থেকে এসব পরীক্ষার রি-এজেন্ট আসে না। বন্ধ থাকা পরীক্ষা তিনটি হলো-হাড়ের পরীক্ষা , কিডনির পরীক্ষা এবং থাইরয়েড পরীক্ষা। এর মধ্যে বোন স্ক্যান ও রেনোগ্রামের প্রতি পরীক্ষা খরচ ৩ হাজার টাকা, আর থাইরয়েড পরীক্ষার খরচ ৭০০ টাকা।
জানা গেছে, চমেকের ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞান বিভাগে আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে কিডনি ও ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য এই তিনটি পরীক্ষা করা হয়। তথ্য অনুযায়ী, ১৯ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুন লেগে যাওয়া অংশে রাখা আমদানি করা পণ্যের মধ্যে ওষুধ ও বিভিন্ন পরীক্ষার উপকরণও ছিল, যা আগুনে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর নতুনভাবে এই পরীক্ষার উপকরণ বিদেশ থেকে আনা হয়নি।
ইনমাসের চট্টগ্রাম শাখার পরিচালক অধ্যাপক পবিত্র কুমার ভট্টাচার্য বলেন, 'ঢাকায় বিমানবন্দরে আগুন লাগার পরও কিছুদিন এই তিনটি পরীক্ষা চলছিল। তবে আগের রি-এজেন্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় দুই সপ্তাহ ধরে কিডনি ও ক্যানসার নির্ণয়ের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। সমস্যা হলো, এই তিনটি পরীক্ষা বেসরকারিভাবে চট্টগ্রামে কোথাও করা হয় না। তাই রোগীরা এখন বিপাকে পড়েছেন।'
তিনি আরও জানান, 'প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ১৫০ জন রোগী এই তিনটি পরীক্ষা করাতে আসেন। এখন পরীক্ষাগুলো বন্ধ হওয়ায় তাদের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। রোগীরা এ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন, তাদের আবার সময় নিয়ে পরামর্শ দিতে হয়। দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।'
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বোন স্ক্যান হলো এক ধরনের পারমাণবিক ইমেজিং পরীক্ষা, যা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ভাঙন, সংক্রমণ, হাড়ের ক্যানসার এবং অন্যান্য অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে ব্যবহার হয়। পরীক্ষায় শরীরে একটি তেজস্ক্রিয় পদার্থ (ট্রেসার) দেওয়া হয়, যা হাড়ে জমা হয়। এরপর স্ক্যানার দিয়ে হাড়ের বিস্তারিত ছবি তোলা হয়। এটি এক্স-রে বা কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফি পরীক্ষার চেয়ে দ্রুত হাড়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পারে।
রেনোগ্রাম হলো এক ধরনের রেডিও-পারমাণবিক পরীক্ষা, যা কিডনির গঠন এবং কার্যকারিতা নির্ণয়ে করা হয়। পরীক্ষায় শরীরে তেজস্ক্রিয় পদার্থ দেওয়া হয় এবং বিশেষ ক্যামেরার মাধ্যমে কিডনির ছবি তোলা হয়। এতে বোঝা যায়, দুটি কিডনি ঠিকভাবে কাজ করছে কি না এবং কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি না।
থাইরয়েড পরীক্ষা হলো এক ধরনের ইমেজিং পরীক্ষা, যা থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা ও গঠন নির্ণয়ে করা হয়। এটি থাইরয়েডের আয়োডিন শোষণের ক্ষমতা যাচাই করে এবং হাইপারথাইরয়েডিজম, ক্যানসার বা অন্যান্য অস্বাভাবিকতা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এই পরীক্ষার দুটি প্রধান পদ্ধতি হলো পারমাণবিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী আপ্রুমা মারমা বলেন,'দ্রুত এই সংকটের সমাধান না হলে রোগীদের অবস্থা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।'

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন