বিএনপির সংকেত পেয়ে তৎপর সম্ভাব্য প্রার্থীরা, নির্বাচনী মাঠে সরগরম ভাব
| বিএনপি | 
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এখনো প্রার্থী ঘোষণা দেয়নি বিএনপি। তবে দলটির কিছু নেতা বলছেন, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাঁরা মনোনয়নের ইঙ্গিত পেয়েছেন। এরপর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ ও প্রচারে নেমেছেন তাঁরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে কয়েক ধাপে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ করেছে বিএনপি। চলতি মাসেই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে দলটি। যদিও এখনো ঘোষণা আসেনি, তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশীকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সুখবর দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান শনিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রার্থী বাছাই অনেকটাই শেষ করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। কিছু আসনে সমস্যা আছে, সেসব নিয়ে তিনি চিন্তা করছেন। অনেকেই বলছেন, তাঁরা প্রার্থী হওয়ার নিশ্চয়তা পেয়েছেন, আমরাও সেটা শুনছি। তবে ঠিক কতজনকে তিনি এমন আশ্বাস দিয়েছেন, তা বলা যাচ্ছে না।’
দলীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অন্তত ৭০ ভাগ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। লন্ডন থেকে ফোনে তারেক রহমান সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনসংযোগে নামতে বলেছেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণার নির্দিষ্ট তারিখ এখনো জানা যায়নি, তবে দলের নেতারা বলছেন, এটি চলতি মাসেই হতে পারে।
সেলিমা রহমান বলেন, ‘ঠিক দিন-ক্ষণ বলা যাচ্ছে না, তবে মনে হচ্ছে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।’
বিএনপি থেকে কারা প্রার্থী হচ্ছেন, তা নিয়ে এখন দলটির ভেতর-বাইরে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সূত্রগুলো বলছে, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা প্রার্থী হচ্ছেন—এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে প্রত্যেকে একটি আসন থেকেই লড়বেন, একাধিক আসনের সুযোগ থাকবে না। অন্যদিকে মধ্যম সারির নেতাদের মধ্য থেকে যোগ্যদের বেছে নিয়েছেন তারেক রহমান। তাঁদের অনেককেই ফোনে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর-১ আসনে মাসুদ অরুণ, বগুড়া-১ এ কাজী রফিকুল ইসলাম, বগুড়া-২ এ মীর শাহ আলম, চাঁদপুর-১ এ সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন এবং শরীয়তপুর-৩ এ মিয়া নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন।
এর মধ্যে কাজী রফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, তারেক রহমানের ফোনে মনোনয়নের নিশ্চয়তা পেয়েই তিনি নির্বাচনী এলাকায় প্রচারে নেমেছেন। তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাকে বিজয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে বলেছেন। তাঁর নির্দেশে আমি এলাকায় প্রচারের কাজ শুরু করেছি।’
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তাঁদের নির্বাচনী মাঠে কাজ করতে বলেছেন। এটাকেই বলা হচ্ছে ‘সবুজসংকেত’।
এদিকে নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি শরিক দল ও সমমনা সংগঠনের সঙ্গেও আসন সমঝোতার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এই আলোচনার মধ্যেই তারেক রহমানের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানাচ্ছেন শরিক দলগুলোর অনেক নেতা। এরপর তাঁরা ভোটের মাঠেও নেমেছেন।
শরিক দলগুলোর এমন নেতাদের মধ্যে আছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ (ঢাকা-১৭), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ (ঢাকা-১৩), গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী (ঢাকা-৬), জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা (কিশোরগঞ্জ-৫), নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না (বগুড়া-৪), লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ (কুমিল্লা-৭), বাংলাদেশ এলডিপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম (লক্ষ্মীপুর-২), গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬) এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ (নড়াইল-২)।
এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ‘আমি নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছি। ২০১৮ সালে জোটে ছিলাম, এবারও আশা করছি প্রার্থী করা হবে। এলাকায় আমাকে হারানোর মতো কোনো প্রার্থী নেই।’
এঁদের বাইরে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি ঢাকা-১৪ আসনে মনোনয়নের বিষয়ে তারেক রহমানের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘অফিসিয়াল ঘোষণার আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। আনুষ্ঠানিকভাবে সবার ঘোষণা এলে তখন এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন