[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

মাদারগঞ্জে গ্রাহকরা দ্বিতীয় দিন উপজেলা পরিষদ ঘেরাও

প্রকাশঃ
অ+ অ-
জামালপুরের মাদারগঞ্জে সমিতি থেকে আমানতের টাকা উদ্ধারের দাবিতে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও করেন গ্রাহকেরা। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পেতে দ্বিতীয় দিনের মতো গ্রাহকরা আন্দোলনে নামেছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় তারা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করেন। এতে প্রশাসনিক সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বেলা তিনটার সময়ও এই কর্মসূচি চলছিল।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, টাকা না পাওয়া পর্যন্ত তারা বিরতিহীনভাবে ঘেরাও চালাবেন। আজ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে আবার আন্দোলন শুরু হবে।

মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাদির শাহ বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলনকারীরা উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করেছেন। এতে সব দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ। তারা টাকা পাওয়ার নিশ্চয়তা চান। সেটা আমাদের কাছে এখন নেই। তারপরও আলোচনায় বসার চেষ্টা চলছে।’

‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’–এর ব্যানারে এই কর্মসূচি চলছে। এতে ভুক্তভোগীসহ স্থানীয় বাসিন্দারাও অংশ নিচ্ছেন। এক বছর ধরে এই ব্যানারে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ ও একাধিকবার উপজেলা পরিষদ ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি।

সকাল সাড়ে ১০টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে নারী–পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার ভুক্তভোগীরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এরপর তারা প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে কার্যালয় ঘেরাও করেন। এতে উপজেলা পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনকারীরা স্লোগান দেন।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, তারা লাভের আশায় কষ্টার্জিত টাকা সমবায় সমিতি নামের ২৩টি প্রতিষ্ঠানে জমা করেছিলেন। কেউ এককালীন, কেউ মাসে মাসে জমা দিয়ে লাভের টাকা নিচ্ছিলেন। এখন লাভ তো দূরের কথা, মূল টাকাই ফেরার বিষয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

অর্থ উদ্ধার কমিটির সদস্য মাহবুব আলম বলেন, ‘আমাদের ধৈর্যের সীমা অতিক্রম হয়েছে। প্রায় তিন বছর ধরে দিনের পর দিন আন্দোলন চালাচ্ছি। কিন্তু এখনো টাকা ফেরত পাইনি। প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এবার টাকা না নিয়ে ঘরে ফিরব না। আগামী রোববার থেকে ২৪ ঘণ্টা অবস্থান শুরু করব।’

বক্তারা জানান, ২৩টি সমবায় সমিতিতে প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক টাকা জমা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা ২০২২ সালের শেষের দিকে আত্মগোপনে চলে যান। ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়েছিলেন তারা। এভাবে জামালপুর থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।

জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান বলেন, ‘শুনেছি, দ্বিতীয় দিনের মতো ঘেরাও কর্মসূচি চলছে। এই মুহূর্তে আমাদের কিছু করার নেই। এর কোনো সমাধান আমাদের কাছে নেই।’ 

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোয় ছিল। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের দাবি, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি।

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকদের ৭৩০ কোটি টাকা সমবায় সমিতিগুলোতে ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা বলছেন, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধনু প্রধান। এই ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোতে রয়েছে। এছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরে কয়েক হাজার গ্রাহক রয়েছেন।

আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, ‘আন্দোলন ছাড়া কেউ ঘরে যাবে না। শত শত মানুষ আন্দোলনে থাকলেও এখনো প্রশাসনের কোনো তৎপরতা আমরা দেখছি না। এবার আমরা শপথ নিয়েছি, বিশ্বাসযোগ্য আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত কেউ বাড়ি ফিরবে না। আন্দোলন এভাবেই চলবে।’

২৩টি সমিতির মধ্যে আল–আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদলের মোস্তাফিজ, স্বদেশের আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমিতির ইব্রাহিম খলিল দীর্ঘদিন আত্মগোপনে আছেন। তাদের মুঠোফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন