শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রায় হলো ৩৯৭ দিনের মাথায়
![]() |
| টিএসসি এলাকায় আনন্দ মিছিল। আজ সোমবার দুপুরে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলা হয়েছিল গত বছরের ১৭ অক্টোবর। এরপর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার শুরু হয়। সবশেষে রায় হতে মোট সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এর রায়ে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামলার অন্য দুই আসামির মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন। সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান আছেন ভারতে। তাঁদের দল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম এখন নিষিদ্ধ।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই আন্দোলনের সময় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে।
পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলার কার্যক্রম শুরু হয় গত বছরের ১৭ অক্টোবর। সেদিন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা (মিসকেস বা বিবিধ মামলা) হয়। ওই দিনই তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এই মামলায় প্রথমে শেখ হাসিনাই ছিলেন একমাত্র আসামি। এ বছরের ১৬ মার্চ তাঁর সঙ্গে সাবেক আইজিপি আল–মামুনকেও আসামি করা হয়।
একাধিকবার সময় বাড়ানোর পর চলতি বছরের ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নাম প্রথমবার আসে গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদনে। সেদিন থেকে এ মামলায় আসামি হন তিনজন—শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও আল–মামুন।
তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ জুন ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেয় প্রসিকিউশন। এর মধ্য দিয়ে ‘মিসকেস’ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় রূপ নেয়।
এরপর গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করেন। সেদিন আল–মামুন ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হওয়ার আবেদন করেন।
গত ৩ আগস্ট এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এর মাধ্যমেই মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। এসব অভিযোগ হলো—উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া; প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের দমন করার নির্দেশ; রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা।
মামলায় প্রথম সাক্ষ্য দেন জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে গুরুতর আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ। তাঁর সাক্ষ্যের মধ্য দিয়েই শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়।
এ মামলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ মোট ৫৪ জন সাক্ষী জবানবন্দি দেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় গত ৮ অক্টোবর। এরপর যুক্তিতর্ক শুরু হয় ১২ অক্টোবর এবং শেষ হয় ২৩ অক্টোবর।
সর্বশেষ ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল জানায়, ১৭ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। সব মিলিয়ে ‘মিসকেস’ থেকে রায় পর্যন্ত সময় লেগেছে ৩৯৭ দিন।
পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন মো. আমির হোসেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম আগেই বলেছিলেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের সাজার পর তাঁরা আপিল করতে পারবেন না। কারণ তাঁরা পলাতক। আপিল করতে হলে তাঁদের আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

Comments
Comments