এমন তো হবার কথা ছিল না: তারেক রহমান
জাতীয় নির্বাচন ঘিরে জনমনে তৈরি সংশয় ও সন্দেহ গণতন্ত্রের পথে অগ্রযাত্রাকে জটিল করে তুলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, শেষ পর্যন্ত কোনো অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে কি না—সেই প্রশ্নও এখন উঠছে। এ বিষয়ে দেশের মাঠে থাকা সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ ছিল না। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় অনেকের মনে প্রশ্ন উঠছে—যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে? এমন তো হবার কথা ছিল না।’
তিনি বলেন, বিএনপির বিজয় ঠেকাতে ইতিমধ্যে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার ও অপকৌশল শুরু হয়েছে। ‘উদ্বেগ ও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংগঠিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, দেশে একের পর এক শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্রের পথে বাধা তৈরি করা হচ্ছে। তবে তাঁর বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়েই পতিত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। গত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশি–বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের ভালোবাসা ও আস্থার কারণেই দলটি প্রতিটি সংকট কাটিয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়েছে। একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে, অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটা সাধ্য, সহযোগিতা করে আসছে।’
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি বলে জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘এর অংশ হিসেবে দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী বা বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।’
তারেক রহমান বলেন, প্রতিটি আসনে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। ‘দেশের প্রতিটি আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও সবার জন্য মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়,’ বলেন তিনি। একই সঙ্গে জানান, ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যাঁরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে রাজপথে ছিলেন, তাঁদের মধ্য থেকেও প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
এই কারণে কিছু আসনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী মনোনয়ন না–ও পেতে পারেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপির নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা—দেশ ও গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।’
নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারেক রহমান বলেন, দেশে সামাজিক উদাসীনতা ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ কোনোভাবেই সভ্য সমাজ হতে পারে না।’ এ জন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ দেশের সচেতন নারী সমাজকে সরকারের কাছে তাঁদের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ ও ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিও দেখানো হয়। এতে জানানো হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকেই বিএনপির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সদস্যপদ নেওয়া যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জেড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির এবং মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেনসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন