[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

এক দিনে দুই ভোট আয়োজন, কঠিন পরীক্ষায় ইসি

প্রকাশঃ
অ+ অ-
নির্বাচন | গ্রাফিক্স: পদ্মা ট্রিবিউন

কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই সরাসরি বড় পরীক্ষায় নামতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। এখনো কোনো নির্বাচন না করেই বর্তমান ইসিকে একই দিনে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট আয়োজন করতে হবে। একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম।

ইসি জানিয়েছে, আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার একই দিনে গণভোটের নির্দেশনা দেওয়ার পর পরিস্থিতি বদলে গেছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে বর্তমান কমিশন উপকরণসহ (লজিস্টিকস) নানা চ্যালেঞ্জে পড়তে পারে। সব প্রস্তুতি শেষ করে সময়মতো ভোট গ্রহণ করাও বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজনকে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করছেন। তবে কমিশনের সূত্র বলছে, এটি চ্যালেঞ্জিং হলেও কঠিন নয়। সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। গণভোটের জন্য শুধু ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ অন্যান্য উপকরণ যোগ করতে হবে। কিছু ভোটকেন্দ্র বাড়াতে হবে। সময়মতো ভোট শেষ করাও চ্যালেঞ্জ হবে। সময়ের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রেখে দুই ধরনের ভোট শুরু ও শেষ করা সম্ভব কি না, তা বুঝতে ইসি ২৯ নভেম্বর মক (মহড়া) ভোট করবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেয়। এই কমিশনের অধীনে এখনো কোনো নির্বাচনী আয়োজন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর ইসি সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে। ইসির দাবি, ওই প্রস্তুতি প্রায় শেষ। দীর্ঘদিনের দাবি মেনে এবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁদের ভোট নেওয়া হবে পোস্টাল ব্যালটে। ইসি আগামী মাসের (ডিসেম্বর) প্রথমার্ধে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে ১৩ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদের ওপর গণভোট আয়োজনের ঘোষণা দেন। এর এক সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ চিঠি দিয়ে ইসিকে গণভোট আয়োজনের সরকারি নির্দেশনা জানায়।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট করতে সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশের অপেক্ষায় আছেন তাঁরা।

সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ভোটের দিন গণভোট আয়োজন চ্যালেঞ্জিং। সাংবাদিকদের তিনি জানান, এমন পরিস্থিতিতে আগে কোনো নির্বাচন কমিশন পড়েনি। এত বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়নি, যা বর্তমান কমিশনের সামনে এসেছে। এবারের ভোটে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)–নির্মিত কনটেন্টও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে আয়োজনের বাড়তি প্রস্তুতি নিয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, ‘সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। এখন গণভোটের জন্য শুধু বাড়তি ব্যালট পেপার লাগবে। সেই ব্যালট ছাপানোর কাগজ সংগ্রহ করেছি। প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি নেই।’ তিনি জানান, একই সঙ্গে দুটি ভোট আয়োজন করায় কমিশনের কাজ বেড়েছে। মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নির্ধারিত সময়ে ভোট শেষ করা। এ ছাড়া শৃঙ্খলা রাখা আরেকটি চ্যালেঞ্জ। এ জন্য ২৯ নভেম্বর মক ভোট হবে। তার ফল দেখে বুথ বাড়ানো হবে কি না, কিংবা কী করা হবে—তা ঠিক করবে কমিশন।

ইসি সূত্র বলছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের আশপাশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই মক ভোট করা হবে। মূল ভোটে যাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন, মক ভোটেও তাঁদের রাখা হবে। নারী–পুরুষের জন্য আলাদা বুথ থাকবে। বয়স্ক, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য ভোটকক্ষে কী ধরনের সুবিধা রাখতে হবে, তাও মক ভোটে পরীক্ষা করা হবে। নির্বাচন কমিশনাররা সেখানে গিয়ে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া, ভোট দিতে কত সময় লাগছে, দুটি ভোট দিতে কোনো জটিলতা হচ্ছে কি না—এসব পর্যবেক্ষণ করবেন।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মক ভোটের পরিকল্পনা থাকলেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোট করা হবে। নারী ভোটকক্ষে ৫০০ এবং পুরুষ ভোটকক্ষে ৬০০ ভোটার রাখার ধারণা করা হচ্ছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, সংসদ নির্বাচনের বড় প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে ছবিসহ ভোটার তালিকা, নির্বাচনী মালামাল সংগ্রহ, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য অ্যাপ প্রস্তুত। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণও চলছে। গণভোটের জন্য বিজি প্রেস থেকে আলাদা বাড়তি ব্যালট ছাপাতে হবে।

একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হবে বলে ইসিকে অতিরিক্ত ব্যালট বাক্সের ব্যবস্থাও করতে হবে। সূত্র বলছে, বর্তমানে ইসির সংগ্রহে আছে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার ব্যালট বাক্স। সংসদ নির্বাচনে সাধারণত লাগে প্রায় ২ লাখ ৮৮ হাজার ব্যালট বাক্স। সে হিসেবে ৫০ হাজারের বেশি ব্যালট বাক্স অতিরিক্ত আছে। বুথ ৪০ থেকে ৪২ হাজার বাড়লেও এর বড় প্রভাব পড়বে না।

সূত্র আরও জানায়, একটি ব্যালট বাক্সে প্রায় ১৫০০ ব্যালট পেপার রাখা যায়। সংসদ নির্বাচনের ব্যালট আগের মতোই সাদা–কালো থাকবে। গণভোটের জন্য সবুজ বা গোলাপি রঙের ব্যালট ছাপানোর চিন্তা হচ্ছে। তবে বিধিমালা ঠিক হলে কমিশন তা চূড়ান্ত করবে। গতকাল সোমবার ডাক বিভাগের সঙ্গে পোস্টাল ভোট নিয়ে বৈঠক করেছে ইসি। একই সিরিয়াল নম্বরের সংসদ ও গণভোটের ব্যালট পেপার যেন একসঙ্গে থাকে—এই নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন।

সূত্র জানায়, প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালট জেলা প্রশাসকের দপ্তরে যাবে না। যিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন, তাঁর দপ্তরে এই ব্যালট পাঠানো হবে। যেসব জেলায় বেশি সংসদীয় আসন রয়েছে, সেখানে একাধিক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের চিন্তা করছে কমিশন।

তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি হিসেবে ২৭ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে এবং ৩০ নভেম্বর সচিব ও বিভিন্ন দপ্তরের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি। ওই বৈঠকে ভোটকেন্দ্র প্রস্তুত, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরিসহ সামগ্রিক বিষয়ে নির্দেশনা দেবে ইসি।

একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন নির্বাচন কমিশনের জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. মো. আব্দুল আলীম। তিনি বলেন, প্রথম চ্যালেঞ্জ লজিস্টিকস। দুই ধরনের ভোটের জন্য দুটি ব্যালট বাক্স লাগবে, দুই সেট ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে। ভোটকেন্দ্র ও ভোটকক্ষের তালিকাও নতুন করে ভাবতে হবে। সময়মতো ভোট শেষ করাও ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ।

আব্দুল আলীম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের দিনে গণভোটকে কতটা গুরুত্ব দেবে, সেটাও ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ। গণভোটের জন্য কমিশনের বর্তমান রোডম্যাপ বদলে নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। পাইলটিং না করে প্রবাসীদের ভোট নেওয়ার ক্ষেত্রেও কমিশনকে চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন