বিদ্যমান আইনে ট্রাইব্যুনালে আসামির সর্বোচ্চ সাজা প্রাপ্য হলে তা-ই দেওয়া উচিত: জামায়াত
![]() |
| প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ। চার্জ গঠন থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যন্ত সবকিছু মিডিয়ার মাধ্যমে জাতি দেখতে পাচ্ছে। বিদ্যমান আইনের আওতায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা প্রাপ্য হলে তা দেওয়া উচিত। ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের কোনো অবিচার করা উচিত নয়। জামায়াত এই বিষয়টি আইন ও বিচারকদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি জানান, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসরদের দেশব্যাপী জ্বালাও–পোড়াও, ভাঙচুর ও নাশকতার প্রতিবাদে’ জামায়াত এই প্রেস ব্রিফিং করেছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্ন ছিল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই–আগস্ট গণহত্যার বিচার চলাকালে তারা কী ধরনের বিচার আশা করে। এর জবাব দেন মিয়া গোলাম পরওয়ার।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের জুলাই–আগস্টে দেশের মানুষকে নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়েছে। জনগণ এসব হত্যার বিচার চায়। সরকার বিচারকাজকে নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এগিয়ে এনেছে এবং ট্রাইব্যুনালও কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। এজন্য জামায়াত সরকার ও ট্রাইব্যুনালকে ধন্যবাদ জানায়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সব হুমকি ও বাধা এড়িয়ে আদালত রায় ঘোষণা করবেন। পর্যায়ক্রমে সব মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, একটি দলের মহাসচিব জানিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের সব মামলা তুলে নেওয়া হবে। বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে এবং তিনি পরে তার বক্তব্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। একজন জাতীয় নেতা যখন কোনো খবর প্রকাশের পর ব্যাখ্যা দেন, সেটাকে জামায়াত ইতিবাচকভাবে দেখে। তবে জাতি তা কীভাবে গ্রহণ করবে তা আলাদা বিষয়। সাধারণ জনগণ এই ব্যাখ্যা ভালোভাবে নেননি। এটি প্রশ্নবিদ্ধ।
অপরাধী, খুনি ও লুটেরাদের দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অপরাধী, খুনি ও লুটেরাদের পক্ষে আর এই জাতির মাঝে ফিরে আসা সহজ হবে না।
আওয়ামী লীগ অনলাইনে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে হুমকি দিয়েছিল, দেশের মানুষ রাজপথে অবস্থান নিয়ে তা প্রতিহত করেছে বলে মিয়া গোলাম পরওয়ার উল্লেখ করেন। সাধারণ মানুষ ও সমমনা আট দলের নেতা-কর্মীরা সারা দেশে অবস্থান নিয়েছেন। কোথাও ফ্যাসিবাদী শক্তি জনতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস দেখায়নি।
শেখ হাসিনাকে ফেরারি আসামি উল্লেখ করে তিনি বলেন, দিল্লির আশ্রয়ে তিনি আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে ভারতের মিডিয়া ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন। প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক দলগুলোকে ফ্যাসিবাদী কণ্ঠে হুমকি দিয়ে দেশে অশান্তি ও অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছেন। তবে দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ যে অপরাধ করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য এবং তাদের আর কখনো এই জাতি গ্রহণ করবে না।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে গাড়ি পোড়ানো, ককটেল বিস্ফোরণ ও স্থাপনায় আক্রমণের মাধ্যমে আতঙ্ক ও ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ নির্বাচনের অভিযাত্রাকে বিঘ্নিত করতে চায়। তবে নতুন কোনো শক্তি বা অপশক্তি দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের সেক্রেটারি মোহাম্মদ রেজাউল করিম এবং মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

Comments
Comments