[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বঞ্চিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ন‍্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বিগত সরকারের আমলে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর চাকরিতে বৈষম্য, বঞ্চনা, অবিচার ও প্রতিহিংসার শিকার হওয়া অবসরপ্রাপ্ত ও বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের আবেদন পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য গঠিত কমিটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে | ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিগত সরকারের সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর যেসব সদস্য অন্যায়ভাবে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাঁদেরও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে সরকার।

রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ৪ আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর চাকরিতে বৈষম্য, বঞ্চনা, অবিচার ও প্রতিহিংসার শিকার হওয়া অবসরপ্রাপ্ত ও বরখাস্ত কর্মকর্তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

এ সময় কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সহকারী অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদুল হাফিজ, কমিটির সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মুহম্মদ শামস-উল-হুদা, মেজর জেনারেল (অব.) শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ শফিউল আজম এবং এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মুহাম্মদ শাফকাত আলী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক উপস্থিত ছিলেন।

কতজনের জন্য কী সুপারিশ
প্রেস উইং জানায়, কমিটি মোট ৭৩৩টি আবেদন পেয়েছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪৫টি আবেদনের ক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয়েছে। তাঁদের স্বাভাবিক অবসর, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীতে বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার ১১৪ জন কর্মকর্তা সম্পর্কে সুপারিশ রয়েছে। তাঁদের (যাঁর জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন-ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছে কমিটি। এর মধ্যে চারজনকে চাকরিতে ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশও রয়েছে।

নৌবাহিনীর ১৯ জন কর্মকর্তার ক্ষেত্রে (যাঁর জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন-ভাতা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা দেওয়ার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

এ ছাড়া বিমানবাহিনীর ১২ জন কর্মকর্তাকে (যাঁর জন্য যা প্রযোজ্য) স্বাভাবিক অবসর, পদোন্নতি, অবসরপূর্ব পদোন্নতি, বকেয়া বেতন-ভাতা এবং সংশ্লিষ্ট সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।

যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন আপনাদের এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলাম, মনে হয়েছিল সামান্য কিছু অনিয়ম হয়েছে। কিন্তু আপনারা যে পুরো ঘটনা তুলে ধরেছেন, তা ভয়ানক। এটা কল্পনারও বাইরে।’

এ সময় কমিটির প্রধান আবদুল হাফিজ জানান, আবেদন পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটি গত ১৯ আগস্ট প্রথম সভা করে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের সেন্ট্রাল অফিসার্স রেকর্ড অফিস, আইএসপিআর, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন রাওয়ার মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আবেদন জমা দিতে বলা হয়। নিজ নিজ বাহিনী গঠিত বোর্ড যাঁদের বিষয়ে সুপারিশ করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কোনো নৈতিক স্খলনজনিত শাস্তি বা অভিযোগ নথিতে ছিল না।

এই কমিটি বাহিনীগুলোর বোর্ডের সুপারিশ বিবেচনায় নিয়ে, তার বাইরেও পাওয়া তথ্য এবং আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সুপারিশ করেছে।

কমিটির অনুসন্ধান
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবেদনকারীদের মধ্যে ছয়জন কর্মকর্তাকে তাঁদের আত্মীয় বা পরিচিতদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দিয়ে বেআইনিভাবে ১ থেকে ৮ বছর পর্যন্ত গুম করে রাখা হয়—যা দেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব। একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সাজানো জঙ্গি নাটকের মাধ্যমে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর স্ত্রীকে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এক বছরের শিশুসহ দুই দফায় দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে রাখা হয়।

তদন্তে আরও জানা যায়, কয়েকজন কর্মকর্তা ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজনকে ‘ব্যারিস্টার তাপস হত্যা প্রচেষ্টা মামলা’ সাজিয়ে নির্যাতন করা হয়। ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ডিজিএফআইতে কর্মরত পাঁচজন কর্মকর্তা মিথ্যা অভিযোগে বা অভিযোগ ছাড়াই চাকরি হারান। বিডিআর হত্যাযজ্ঞের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দরবারে প্রশ্ন করার দায়িত্ব পাওয়া কয়েকজন কর্মকর্তাকে পরে দরবারে হট্টগোলের অজুহাতে দোষী করা হয় এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে বরখাস্ত করা হয়। তদন্তে আরও বেরিয়ে এসেছে—চারজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (লেফটেন্যান্ট) নিয়মমাফিক ধর্মীয় আচরণ পালন করায় তাঁদের একটি দলের অনুসারী বা জঙ্গি ট্যাগ দিয়ে চাকরি থেকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন