সংগীত শিক্ষক পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি উদীচীর

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়কে বাদ দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহমুদ সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেছেন, শিশু-কিশোরদের সৃজনশীলতা, মানবিক বোধ, দলগত চেতনা এবং শারীরিক-মানসিক ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশের জন্য সংগীতচর্চা, শিল্পকলা ও ক্রীড়া শিক্ষা অত্যন্ত প্রয়োজন।

বিবৃতিতে উদীচী নেতারা আরও বলেন, পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই শিশুদের মানসিক বিকাশ ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধির জন্য সংগীত, শিল্পকলা ও শারীরিক শিক্ষা দেওয়া হয়। শিক্ষাকে শুধু পরীক্ষার খাতা ও পাঠ্যপুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা মানে ছাত্রছাত্রীদের চিন্তা ও আবেগের জগৎ সংকীর্ণ করা। সংগীত ও শিল্প মানুষকে মুক্তভাবে ভাবতে শেখায়, অনুভূতির শক্তি জাগিয়ে তোলে এবং সহমর্মিতা তৈরি করে। ক্রীড়া শিক্ষা শিশুর আত্মবিশ্বাস, শৃঙ্খলা, নেতৃত্ব, দলগত সমন্বয় ও শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করে। এই দুই বিষয় বাদ দিলে বা অবমূল্যায়ন করলে প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামো হবে বিকলাঙ্গ, সংকীর্ণ এবং মানবিকতাহীন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ যে অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক চেতনার ওপর প্রতিষ্ঠিত, এই সিদ্ধান্ত সেই চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শিশুদের শিল্প ও ক্রীড়া শিক্ষা থেকে দূরে সরিয়ে দিলে তাদের ভেতরের সৌন্দর্যবোধ, কল্পনাশক্তি, মানবিক অনুভূতি ও সৃজনশীলতার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। এর প্রভাব পড়বে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ চরিত্রেও। একটি প্রগতিশীল, মুক্তমনা ও নান্দনিকতায় সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে হলে প্রাথমিক স্তর থেকেই শিশুকে শিল্প, সংস্কৃতি ও খেলাধুলার সুযোগ দিতে হয়। রাষ্ট্র যদি সেই দরজা বন্ধ করে দেয়, তা জাতিকে পশ্চাৎ–মুখী করে দেওয়ার সমান হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, যারা ছোটবেলা থেকেই সুর ও সংগীত চর্চা করে বড় হয়, তাদের মধ্যে সদা শুভবোধ জাগ্রত থাকে এবং তারা মন্দ কোনো কাজের দিকে আকৃষ্ট হয় না। সুরের প্রতি আকর্ষণ মানুষের জৈবিক বৈশিষ্ট্য। বাংলার পথে–প্রান্তরে প্রাচীন কাল থেকে সংগীতের চর্চা হয়ে আসছে, যা বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতির একটি প্রধান অংশ। তাই উদীচী সরকারকে অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষায় যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পুনর্বহাল করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।