[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

জুলাই সনদ নিয়ে সরকারের শেষ চেষ্টা, কী বলছে বিএনপি–জামায়াত–এনসিপি

প্রকাশঃ
অ+ অ-

জুলাই সনদ | প্রতীকী ছবি

সরকার আহ্বান জানালেও জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। বড় দুই দলই জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অটল রয়েছে। এ নিয়ে যে জট তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে সরকারের শেষ উদ্যোগ কতটা সফল হবে—এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

সনদ বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একক দিকনির্দেশনা দিতে সাত দিনের সময় দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সোমবার সেই সময়সীমা শেষ হয়েছে। এখন ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোও সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে।

সরকারের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে উপদেষ্টারা নিয়মিত আলোচনা করছেন। আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করতে পারেন।

সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট একই দিনে করা এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে চায় সরকার।

সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে একটি খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা। ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি করতে চায়। রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিদাওয়ার মধ্যে কিছুটা সমন্বয় করে সমাধান বের করার চেষ্টা চলছে। এ ক্ষেত্রে সংসদ নির্বাচন ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট একই দিনে আয়োজন এবং সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়টি বিবেচনায় রাখছে সরকার।

এদিকে বিএনপি সূত্র জানায়, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের এ উদ্যোগকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না দলটি। পিআর পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনসহ যেসব সংস্কার প্রস্তাবে বিএনপির আপত্তি আছে, সেগুলো নিয়ে নতুন করে আলোচনার সুযোগ আছে বলে মনে করে না তারা। বিএনপির মতে, সংস্কার বা সনদ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি এখন ‘চ্যাপ্টার ক্লোজড’।

বিএনপির এখন পূর্ণ মনোযোগ ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে। তারা জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের দাবিতে অনড়। তবে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আদেশ জারি করার বিষয়ে বিএনপির আপত্তি আছে। দলটির দাবি, তারা ক্ষমতায় গেলে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সংবিধান সংস্কার করবে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী দ্রুত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির দাবি জানাচ্ছে। দলটি চায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট অনুষ্ঠিত হোক। এ দাবিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল বড় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) আরও কয়েকটি দল মনে করে, এ ক্ষেত্রে সরকারকে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। তাদের মতে, সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে সংকট ও অনিশ্চয়তা কেটে যাবে।

বিএনপি সূত্র জানায় তারা মনে করে, সংস্কার বা সনদ নিয়ে আলোচনার ‘চ্যাপ্টার ক্লোজড’।

৩০টি দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। এসব প্রস্তাবের মধ্যে ৪৮টি সংবিধান-সংক্রান্ত। এর অন্তত ৩৬টি প্রস্তাবে কোনো না কোনো দলের ভিন্নমত রয়েছে।

প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর সরকারকে দুটি বিকল্প সুপারিশ দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে দুটি সুপারিশের কোনোটিতেই ভিন্নমতের বিষয়টি রাখা হয়নি। সুপারিশ অনুযায়ী, প্রথমে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ’ জারি করা হবে। এরপর ওই আদেশ ও ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে, পরবর্তী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে।

বিকল্প সুপারিশে বলা হয়েছে, এ সময়ের মধ্যে সংসদ সংবিধান সংস্কারে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে। গণভোটের তারিখ নির্ধারণের বিষয়টি সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি ঐকমত্য কমিশনের এই সুপারিশকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও বিএনপি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বিশেষ করে ভিন্নমতের বিষয়টি বাদ রাখাকে দলটি ‘প্রতারণা’ হিসেবে দেখছে।

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টনে বড় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কোনো আদেশ জারি করার এখতিয়ার বর্তমান সরকারের নেই বলে মনে করে বিএনপি। দলটির মতে, এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যেতে পারে, আর সেই প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে নতুন একটি অধ্যাদেশ করে গণভোট আয়োজন করা উচিত। বিএনপি চায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই যেন গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। তাদের ধারণা, এতে আগামী সংসদকে আলাদা কোনো ক্ষমতা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না এবং সনদ বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে।

ভিন্নমতের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান হলো—জুলাই সনদের মধ্যেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে কোন প্রস্তাবে কোন দলের ভিন্নমত রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ভিন্নমত উল্লেখ করে যদি জনগণের সমর্থন পায়, তাহলে তারা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। তাই বিএনপির মতে, গণভোটে সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে যারা জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হবে, তারা নিজেদের ভিন্নমতের ভিত্তিতেই সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে।

বিএনপির সূত্র জানিয়েছে, দলটি এই অবস্থান থেকে সরে আসছে না। বিশেষ করে ভিন্নমত এবং গণভোটের সময়সূচি—দুটো বিষয়েই তারা কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়।

একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি মেনে নেবে—এমনটা আশা করছে সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এ ধরনের কোনো প্রস্তাব আমরা সরকারের কাছ থেকে পাইনি। যদি সরকার কোনো প্রস্তাব দেয়, তখন এ বিষয়ে আমরা কথা বলব।’

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে, তাতে একমত জামায়াতে ইসলামী। তবে দলটি জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবিতে অনড় রয়েছে। আদেশ জারি ও আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীসহ আট দল রাজপথে আন্দোলন করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামায়াতে ইসলামী মনে করে, ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে। দলটির মতে, এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বিশেষ করে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠন এবং সাংবিধানিক পদে নিয়োগের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মৌলিক পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার পক্ষে নয় তারা।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘সংকট সমাধানে আলোচনার দরজা সব সময় খোলা আছে। সরকার বা রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে উদ্যোগ নিতে পারে। তবে জুলাই সনদে হাত দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংকট উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা উচিত।’ 

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে এনসিপি। তবে কমিশন সুপারিশ দেওয়ার পর তা বাস্তবায়ন না করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার আহ্বান জানানোকে সরকারের গা বাঁচানোর চেষ্টা বলে মনে করছে দলটি। উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিসহ বিভিন্ন মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে প্রস্তাব দিয়েছে, এনসিপি চায় সেগুলো সেইভাবেই বাস্তবায়ন করা হোক।

গণভোটের সময়সূচি নিয়ে দলটির অবস্থান তুলনামূলকভাবে নমনীয়। তাদের মতে, সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা থাকলে গণভোট সংসদ নির্বাচনের দিনও হতে পারে, আবার তার আগেও করা যেতে পারে।

এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সরকার সংস্কারের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তাই জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারকেই এখন সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাহলে রাজনৈতিক সংকট ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাবে।’ 

কমিশন সুপারিশ দেওয়ার পর তা বাস্তবায়ন না করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার আহ্বানকে সরকারের গা বাঁচানোর মনোভাব বলে মনে করে দলটি।

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন