রাজনৈতিক দল নিজেরা আলোচনা করে সমঝোতা: ইতিহাস কি বলছে?
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে, দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একজোট হয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিক। এই আলোচনার আয়োজন সরকার করবে না; রাজনৈতিক দলগুলোই নিজেরাই করতে হবে। যদি দলগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে একমত হতে না পারে, সরকার নিজস্বভাবে সিদ্ধান্ত নেবে।
গত সোমবার অন্তর্বর্তী সরকার এই অনুরোধ জানিয়েছে। এখন তিন দিন পেরিয়ে গেছে, তবু দলগুলোর মধ্যে আলোচনার কোনো ইঙ্গিত দেখা যায়নি। এমনকি অনানুষ্ঠানিকভাবে কিছু আলোচনাও হয়নি। সময় কম থাকায় এবং বাস্তবতা বিবেচনা করে, রাজনৈতিক দলগুলো নিজের উদ্যোগে সংলাপে বসবে—এমন ভরসা বিশ্লেষকরা পাচ্ছেন না।
নব্বইয়ের দশকে স্বৈরাচারী এইচ এম এরশাদের পতনের পর জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কয়েকবার সংকট তৈরি হয়েছিল। তখন সমাধানের জন্য কখনো নিজ উদ্যোগে, কখনো প্রভাবশালী দেশ বা জাতিসংঘের মাধ্যমে সংলাপ আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনোবারই সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং সংলাপের পর দেশ আরও সংঘাতের দিকে গেছে এমন নজির বেশি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতন হয়। ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেন। আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা মাথায় রেখে রাজনৈতিক দল, সরকার ও নাগরিক সমাজ সবার মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের তাগিদ দেখা দেয়। এরপর সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থাসহ সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি কমিশন গঠন করা হয়। সব কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ এই কমিশনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
ঐকমত্য কমিশন প্রায় সাড়ে আট মাস ধরে ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করে জুলাই সনদ প্রণয়ন করে। অধিকাংশ দল এতে সই করেছে। কিন্তু এই জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে দলগুলো একমত হতে পারেনি। সাড়ে আট মাসে সরকারের উদ্যোগে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা গেছে, তা এক সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলো করতে পারবে—এমনটা বিশ্লেষকরা আশা করছেন না। অতীতে সংলাপের ব্যর্থতা এই ধারণা জন্ম দিয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জুলাই সনদ বাস্তবায়নের তিনটি ধাপ রয়েছে—আদেশ জারি, গণভোট, এবং আগামী সংসদকে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের ক্ষমতা দেওয়া। এই তিন ধাপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতপার্থক্য আছে। মূল বিরোধ গণভোটের সময় এবং সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত রাখা না রাখার ব্যাপারে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংলাপ যেন এক চিরচেনা দৃশ্য—সংকট তৈরি হলে দলগুলো আলোচনায় বসে, আর সমঝোতা না হলে সেই সংলাপ ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যায়। ১৯৮৮ সালের সামরিক শাসনের শেষ থেকে ২০২৫ সালের বর্তমান উদ্যোগ পর্যন্ত বহু সংলাপ হয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন থেকে গেছে—এই সংলাপগুলো কতটা সমাধান দিয়েছে?
নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন ও রাজনৈতিক সমঝোতা
১৯৮৮ সালের নির্বাচনের পর সামরিক স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের পদত্যাগ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল আন্দোলনে নামে। আন্দোলনরত দলগুলো নিয়ে গড়ে ওঠে তিনটি জোট। এগুলো হলো—আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন আট–দলীয় জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাত–দলীয় জোট, এবং বাম ঘরানার দলগুলোর সমন্বয়ে পাঁচ–দলীয় জোট। একই দাবিতে জামায়াতে ইসলামীও আন্দোলন চালায়, তবে তারা কোনো জোটে ছিল না।
এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর এই তিনটি জোট আলাদা আলাদা সমাবেশ থেকে একযোগে একটি ‘রূপরেখা’ ঘোষণা করে। এটি তিন জোটের রূপরেখা নামে পরিচিত। এর মূল লক্ষ্য ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে সার্বভৌম সংসদ গঠন করা এবং এরশাদের পদত্যাগ নিশ্চিত করা। রূপরেখা ঘোষণার দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত করা হয় এবং ক্ষমতা তাঁর হাতে হস্তান্তর করা হয়।
এরশাদ সরকারের পতনের পর গণ-আন্দোলনের মধ্যেই প্রথম কার্যকর রাজনৈতিক সংলাপের নজির তৈরি হয়। বিএনপি, আওয়ামী লীগ, বাম ও ইসলামি দলগুলো সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একাধিক বৈঠকে বসে অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা ঠিক করে।
রূপরেখায় থাকা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় এবং সরকার গঠন করে। তবে বিএনপি সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্ত করেনি। এরপর বিরোধী দলগুলো পুনরায় রাজপথে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালায়।
তিন জোটের রূপরেখা আলোচিত হলেও কোনো জোট সেখানে স্বাক্ষর করেনি। তাই এটি জাতীয় সনদে পরিণত হয়নি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধী দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করলে ১৯৯৪ সালের ৩১ আগস্ট জাতীয় সংসদে বিএনপির নেতা প্রয়াত একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের নেতা আবদুস সামাদ আজাদের মধ্যে সংলাপ হয়। কিন্তু কোনো সমাধান বের হয়নি।
সে সময় কমনওয়েলথ মহাসচিব এনিয়াওকুর এমেকা ঢাকায় এসে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে পাঠান স্যার স্টিফেন নিনিয়ানকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক সংলাপের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত নিনিয়ান দফায় দফায় দুই পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু তিনিও বাংলাদেশে সফল হননি।
আওয়ামী লীগসহ প্রধান বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্যে দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপি পুনরায় ক্ষমতায় আসে। তবে বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে এক মাসের মধ্যে সরকারের পতন ঘটে। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরায় গঠন করা হয়। জুনে আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
| সংলাপ ব্যর্থ হওয়া নিয়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন। ২১ নভেম্বর ১৯৯৪, আজকের কাগজ |
মান্নান ভূঁইয়া ও আবদুল জলিলের সংলাপ
আন্দোলনের চাপের মধ্যে ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দুটি নির্বাচন হয়। কিন্তু ২০০৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়। বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে মানতে অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪–দলীয় জোট। তারা লাগাতার আন্দোলন চালায়।
এর মধ্যে ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় সংসদ ভবনে সংলাপ হয়। বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল দুই সপ্তাহে ছয়বার বৈঠক করেন। সংলাপে আওয়ামী লীগ ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করে, যার মূল দাবি ছিল নিরপেক্ষ উপদেষ্টা পরিষদ গঠন এবং বিতর্কিত নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। কিন্তু দুই নেতা নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকেন। আন্দোলন, অবরোধ ও সংঘর্ষের কারণে সংলাপ ভেস্তে যায়।
সংলাপ ব্যর্থ হয়, এবং অচলাবস্থার জেরে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেয়। দেশের দুই প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই নেত্রী মুক্তি পান। তবুও রাজনৈতিক সংকট পুরোপুরি শেষ হয়নি। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী জিমি কার্টার ঢাকায় এসে রাজনৈতিক সংলাপের মধ্যস্থতা করেন। তাঁর নেতৃত্বে কার্টার সেন্টার জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। কার্টার শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন।
২০০৮ সালের ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসে।
তারানকোর উদ্যোগও ব্যর্থ
আওয়ামী লীগ, যারা আগে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দুই দফা আন্দোলন করেছিল, ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানায় বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৩ সালের শেষ দিকে ঢাকায় আসেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি ছয় দিন ঢাকায় অবস্থান করে ১০ ও ১১ ডিসেম্বর সংলাপ করেন আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। তৃতীয় সংলাপ হয় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি নিল ওয়াকারের উপস্থিতিতে। কোনো সংলাপই সফল হয় না। বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনে না অংশ নিয়ে হরতাল ও অবরোধ শুরু করে এবং জ্বালাও-পোড়াওও হয়।
এর মধ্যেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বাকি ১৪৭ আসনে ভোট হয় সহিংসতার মধ্যে।
রাতের ভোটে সংলাপ বিফলে
২০১৪ সালের ভোটের পর ২০১৮ সালের নির্বাচনও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর বিরোধিতা করে বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য বিরোধী দল।
বিরোধী দলের রাজনীতিতে তখন নতুন মেরুকরণ হয়। বিএনপির নেতৃত্বে ২০-দলীয় জোট এবং কিছু বামপন্থী দল নিয়ে গঠিত হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নেতৃত্ব দেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ড. কামাল হোসেন। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর গণভবনে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন নেতা। ক্ষমতাসীন জোটের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ১৪ দলের নেতারা।
বিরোধী জোট অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের পদত্যাগ, জাতীয় সংসদ বাতিল, আলোচনা করে নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবি উত্থাপন করে। শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস পাওয়ার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনের আগে দুই জোটের মধ্যে ছোট পরিসরে আরও একটি সংলাপ হয়।
২০১৮ সালের ওই নির্বাচন ‘রাতের ভোট’ নামে পরিচিত হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জোট ২৯৩ আসনে জয়ী হয়। বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল মাঠে দাঁড়াতে পারে না।
এর বাইরে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ নিয়ে দুই দফা সংলাপ হয়। ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং ২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেন। ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে আবারও সংলাপ হয় আবদুল হামিদের নেতৃত্বে। তবে অতীতের আলোচনায় কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল সংলাপ বর্জন করে।
১৯৯০ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংলাপ বহুবার হয়েছে, ব্যর্থতাও এসেছে বারবার। তবুও সংকটের মুহূর্তে সংলাপই রাজনীতিতে একমাত্র আশ্রয় হিসেবে ফিরে এসেছে।
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, আগে বিদেশিরা দূত হিসেবে থাকলেও সংলাপ সফল করতে পারেননি। এবার রাজনৈতিক দল নিজে বসে সফল আলোচনায় পৌঁছাতে পারবে—এটা খুব দূরাহ মনে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ করার সময় দ্বিমত ও ভিন্নমত দেখা গেছে। নোট অব ডিসেন্টের উদাহরণ রয়েছে। এত আয়োজন এবং সময়ের পরও বাস্তবায়নে একমত হতে পারেনি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো মিলে সমাধানে আসবে—এটা বিশ্বাস করা কঠিন। এছাড়া, ঐক্য ছাড়া সংস্কার কতটা বাস্তবায়ন হবে, সেই প্রশ্নও রয়ে গেছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন