[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছে দেশ, দোলাচল চলছে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশঃ
অ+ অ-
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ‘ট্রানজিশনাল পিরিয়ড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, নির্বাচন সামনে থাকলেও এটি কোনো শেষ লক্ষ্য নয়। বরং দেশকে আবার গণতন্ত্রে ফেরানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য।

আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএনপি ও ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। সেখানে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হয়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজ আমরা একটা ট্রানজিশনাল পিরিয়ডে আছি। একটা দোলাচল চলছে। নির্বাচনের সময় ঘোষণা হয়েছে। এখনো শিডিউল হয়নি। হবে আশা করছি। নির্বাচন কিন্তু সবকিছুর শেষ নয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়া এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলাই সবচেয়ে বড় ঘাটতি।’

মির্জা ফখরুল মনে করেন, টেকসই রাষ্ট্র গড়তে হলে বিচার বিভাগ, সংসদ, গণমাধ্যম ও প্রশাসনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতে হবে।

গত ১৬ বছরে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হওয়া দমন-পীড়ন, গুম-খুন ও মিথ্যা মামলার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, বিএনপি একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। তিনি জানেন না, পৃথিবীর আর কোনো লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এত অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে গেছে কি না। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। প্রায় ২০ হাজার নেতা–কর্মী শহীদ হয়েছেন। এগুলো ইতিহাসে তুলে ধরতে হবে, নথিতে আনতে হবে। এসব ঘটনা গবেষণার মাধ্যমে নথিভুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

সংস্কার নিয়ে সাম্প্রতিক আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে দলটির দীর্ঘদিনের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, আজ সংস্কারের কথা জোরেশোরে বলা হচ্ছে। অথচ তাঁরা আগেই সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন। সংস্কারের দাবিকে কেউ ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে দেখালে তা হবে সংকীর্ণতা।

বিএনপি বিপ্লবী দল নয়, বরং লিবারেল ডেমোক্র্যাট হিসেবে সব ধর্ম-বর্ণ-মতের মানুষকে নিয়ে ‘রেইনবো স্টেট’ গড়ার লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার—‘উই আর লিবারেল ডেমোক্র্যাটস।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে একদিকে শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে ‘মবক্রেসি ভায়োলেন্স’ চলছে। এটা কীসের ইঙ্গিত, তিনি জানেন না। তাঁর মতে, এই রায়ের গুরুত্ব কমানোর জন্য একটি বিশেষ মহল মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে এসব করছে। বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। কোনো মহল সচেতনভাবে, খুব ধূর্তভাবে, চতুরতার সঙ্গে এটা করছে কি না, তা দেখা উচিত। কোনো মহল বিভক্তি তৈরি করছে কি না, তাও লক্ষ করা উচিত।

গণতন্ত্রের বাস্তব অনুশীলনের অভাবকে দেশের দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকটের মূল কারণ বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূল কথা হলো—‘আমি তোমার সঙ্গে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব।’ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখানে অনেকেই অন্যের মতকে সহ্য করতে চান না।

গণতন্ত্রের পক্ষে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট্ট বিবৃতিতেই দল ও জাতির জন্য পথনির্দেশনা আছে—‘প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, আসুন আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাই একসঙ্গে কাজ করি।’ বিদেশে থাকা তারেক রহমানও গণতন্ত্রের পক্ষে জনগণকে সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান। সেখানে আরও বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, জিয়া পরিষদের নেতা অধ্যাপক বি এম নাগিব হোসেন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে বিএনপি’ বইয়ের সম্পাদক বাবুল তালুকদার। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিনসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন