নতুন শিক্ষাবর্ষে তিন শ্রেণির বই ছাপার কাজ এখনও শুরু হয়নি
| পাঠ্যবই | প্রতীকী ছবি |
আসন্ন নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের অর্ধেকের বেশি বই বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের কোনো বই এখনো দেওয়া সম্ভব হয়নি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)-এর। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কাজের আদেশ এখনো দেওয়া হয়নি। নবম শ্রেণির বই ছাপার জন্যও মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি মাত্রই হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে জানুয়ারির শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই, বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরের বই পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন না এনসিটিবির কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, এবার ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই আবার দরপত্রের মাধ্যমে ছাপানো হচ্ছে। পাশাপাশি মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজে মন্ত্রণালয় ও ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন পেতে দেরি হয়েছে। তাই বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া কঠিন হবে।
চলতি বছরও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে সব বই পৌঁছাতে প্রায় তিন মাস দেরি হয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবি সমালোচনার মুখে পড়েছিল। কিন্তু আসন্ন শিক্ষাবর্ষেও একই পরিস্থিতি ঘটছে।
এনসিটিবির সূত্র জানিয়েছে, আগামী বছর বিনা মূল্যে বিতরণের জন্য প্রাথমিক স্তরের মোট পাঠ্যবই ৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৯ কপি। এর মধ্যে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ছাপা ও বাইন্ডিং শেষ হয়েছে ৬ কোটি ৬৫ লাখের বেশি বইয়ে। সরবরাহ-পূর্ব পরিদর্শন (পিডিআই) করা হয়েছে ৫ কোটি ৫১ লাখের বেশি বইয়ে। আর মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৮৫ লাখের বেশি বই।
এনসিটিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক স্তরের বই ছাপায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মাধ্যমিক স্তরের বই নিয়ে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। এবার মোট বইয়ের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কিছুটা কম।
গত বছর বই সরবরাহে দেরি হওয়ায় এবার এনসিটিবি আগেভাগেই দরপত্র প্রক্রিয়া প্রায় শেষ করে মূল্যায়নের কাজও সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু হঠাৎ ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র সেপ্টেম্বর মাসে বাতিল করা হয়। এই তিন শ্রেণির বইয়ের দরপত্র গত মে ও জুনে আহ্বান করা হয়েছিল। এরপর আবার এনসিটিবি দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্র আহ্বানের পর যাচাই-বাছাই শেষ হলেও এখনো এই তিন শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়া যায়নি।
এবার ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৩ লাখের বেশি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ১৫ লাখের বেশি এবং অষ্টম শ্রেণির মোট বই ৪ কোটি ২ লাখের বেশি।
দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কার্যাদেশের পর চুক্তি হবে, আর চুক্তির পর ৪৫ দিনের মধ্যে এই তিন শ্রেণির বই ছাপা ও সরবরাহের কথা। এমন পরিস্থিতিতে কার্যাদেশ ও চুক্তি শেষ করে জানুয়ারির শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, এবার নবম শ্রেণির মোট পাঠ্যবই ৫ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার ২৮ কপি। বুধবার মতিঝিলে এনসিটিবি কার্যালয়ে দেখা গেছে, এসব বই ছাপার বিষয়ে মুদ্রণকারীদের সঙ্গে এখন চুক্তি হচ্ছে। মুদ্রণকারীরা চুক্তি করতে আসছেন।
নিয়মানুযায়ী, চুক্তির পর ৬০ দিনের মধ্যে নবম শ্রেণির বই সরবরাহের কথা। ইতিমধ্যে নভেম্বরের প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। নভেম্বর-ডিসেম্বরে মুদ্রণকারীরা সাধারণত নোট ও গাইড ছাপায় ব্যস্ত থাকেন। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে পোস্টার ছাপানোর কাজও বাড়বে। সব মিলিয়ে জানুয়ারির শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
অন্যদিকে, ইবতেদায়ি স্তরের মোট বই ৩ কোটি ১১ লাখের বেশি; এর মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই ছাপা হয়েছে।
এনসিটিবির বিদায়ী চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী জানিয়েছেন, নবম শ্রেণির বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে এবং ছাপার কাজও চলছে। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার কার্যাদেশও দু-এক দিনের মধ্যে দেওয়া হবে। প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার অগ্রগতি ভালো। আশা করা যায়, বছরের শুরুতেই সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছে দেওয়া যাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন