তুমি তোমার স্বপ্নকে অনুসরণ করো: অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, ‘মানুষের আনন্দকে কোনো দিন বাধা দেওয়া যায় না। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে—আত্মা কী চায়, স্বপ্ন কী চায়, জীবন কী চায়। উত্তরটা অনুসরণ করতে হবে। যে শিক্ষা আমার শরীর চায়, আমার হৃদয় চায়, যার মাধ্যমে নানাভাবে সুন্দর হয়ে উঠতে চায়, সেটিকে তাড়া করতে হবে। কোনোভাবে বাধা দেওয়া যাবে না।’
ঢাকার সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে ব্র্যাকের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ‘কার্নিভ্যাল অব চেঞ্জ ২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দুই দিনব্যাপী এই আয়োজনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ২৫০-এর বেশি তরুণ-তরুণী অংশ নিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তরুণ উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের সামাজিক উদ্যোগ ও উদ্ভাবন প্রদর্শনের পাশাপাশি রয়েছে মতবিনিময়, আলোচনা, কর্মশালাসহ নানা আয়োজন।
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ থাকে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘সেখানে কোনোটা বড়, কোনোটা ছোট নয়। সেই মানুষের মধ্যে যেটা সবচেয়ে বেশি সক্রিয়, তাকে অনুসরণ করো। তুমি তোমার স্বপ্নকে অনুসরণ করো, বেদনাকে অনুসরণ করো, ভালোবাসাকে অনুসরণ করো। নতুন কিছু করো।’
জীবনে সফল হওয়ার জন্য লক্ষ্য অর্জনে পাগলের মতো হতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘আজকের পৃথিবী এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যেখানে উন্মাদ হওয়া সহজ নয়। যদিও পাগলা গারদ বেড়েছে, কিন্তু উন্মাদ আমি দেখি না। কোনো কিছু করার জন্য উন্মত্ততাটা লাগবে।’
শনিবার সকালে প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শুরু হয় অনুপ্রেরণাদায়ক সেশন ‘ইয়ুথ ভয়েসেস একোয়িং দ্য এসেন্স অব চেঞ্জমেকিং’- দিয়ে। এরপর ‘দ্য ওয়ে টু সাকসেস’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন ব্র্যাকের হিউম্যান ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ক্লাস্টারের পরিচালক সাফি রহমান খান। বেলা তিনটার দিকে ‘আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক মো. শরিফুল ইসলাম হাসান।
![]() |
| ঢাকার সাভারের ব্র্যাক সিডিএম-এ ব্র্যাকের উদ্যোগে ‘কার্নিভাল অব চেইঞ্জ ২০২৫’ অনুষ্ঠানে পুরষ্কার পাওয়া তিনটি উদ্যোগের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রধান অতিথিসহ ব্র্যাকের কর্মকর্তারা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
চূড়ান্ত পর্বে মনোনীত ১২টি প্রকল্পের মধ্যে সৃজনশীলতা, সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা ও স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্টোরিস অব ইনক্লুশন’, ‘জলশিখা’ এবং ‘গুডডু টয়স’—এ তিনটি উদ্যোগকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এসব প্রকল্প ও উদ্যোগকে আরও টেকসইভাবে গড়ে তুলে বড় পরিসরে নিয়ে যেতে উদ্যোক্তারা ব্র্যাকের ‘সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরস ফেলোশিপ’-এর সুযোগ পাবেন।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল ইসলাম হাসান বলেন, ব্র্যাক এমন একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে, যেখানে প্রত্যেক মানুষ তার ভেতরের সম্ভাবনার বিকাশ ঘটাতে পারে এবং কোনোভাবে শোষণ-নিপীড়নের ঘটনা যেন না ঘটে।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘যাঁরা সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন এবং সমাধান নিয়ে কাজ করবেন—এমন মানুষ আমরা তৈরি করতে চাই। এই কাজের ফলে এখন একটি বড় গ্রুপ তৈরি হয়েছে। সেখানে দেড় হাজারের মতো অ্যালামনাই রয়েছেন, যারা তাদের সাধ্য অনুসারে স্থানীয় সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করে।’
কার্নিভ্যালের দ্বিতীয় দিনে রোববার অংশগ্রহণকারী তরুণ-তরুণীদের আত্মোন্নয়ন, ক্যারিয়ার নির্দেশনা এবং দেশ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার বিষয়ে মতবিনিময়, আলোচনা, সংলাপ ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।
আয়োজকরা জানান, ব্র্যাকের ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’ (এএনএন) বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে। জীবনদক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং নানাবিধ কার্যক্রমের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এএনএন এখন দেশের ১৭টি জেলায় বিস্তৃত। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ২ হাজার ৬০০-এর বেশি তরুণ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। এই তরুণ চেঞ্জমেকারদের মধ্যে অনেকে গেটস ফাউন্ডেশন, নাসা ও জাতিসংঘ থেকে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’-এর অ্যালামনাইরা এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন