বিএনপিতে কিছু আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের ইঙ্গিত
| বিএনপি |
সম্ভাব্য একক প্রার্থীদের মাঠের কর্মকাণ্ড এখন ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি। বিশেষ করে মনোনয়নবঞ্চিত ও ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘোষিত প্রার্থীদের আচরণে দল সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। একই সঙ্গে তৃণমূলে ঐক্য গঠনের উদ্যোগে কেউ বাধা সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যেও ঘোষিত আসনগুলোর অন্তত সিকিভাগে তীব্র ক্ষোভ ও বিরোধ দেখা গেছে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের তদন্তে জানা গেছে, এসব আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তাদের মতে, প্রার্থী নির্বাচন পুনর্মূল্যায়ন না হলে কয়েকজন বঞ্চিত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।
সূত্র বলছে, ঘোষিত ২৩৭ প্রার্থীর তালিকাকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিনে বেশ কিছু আসনে নতুন দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের মাঠপর্যায়ের অবস্থান নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান যাচাই করছে। যাচাই-বাছাইয়ের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় পরিবর্তন আসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন বিএনপির কয়েকজন নেতা। যদিও দল এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপির মতো বড় দলে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা স্বাভাবিক। বেশ কয়েকটি আসনে যোগ্য প্রার্থী বাদ পড়তে পারেন। হাইকমান্ড বিষয়টি বিবেচনা করে খতিয়ে দেখছে।’
গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এ বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়। ওই বৈঠকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার দলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক পুলিশ প্রধানের ফাঁসির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়েছে বলে দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
দলটির নেতারা মনে করেন, এই রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি জনগণকে সদাসর্বদা সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিএনপি অন্যান্য মামলায় অভিযুক্তদের সুবিচারের দাবিও জানিয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছরের গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার এবং ২০২৪ ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার সহস্রাধিক শহীদের আত্মা শান্তি পাবে এবং তাদের পরিবার-পরিজনের ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হবে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
বৈঠকে বিএনপির প্রার্থী তালিকা ও মিত্রদের দেওয়া বেশ কয়েকটি তালিকা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেখানে ঘোষিত আসনগুলোর অন্তত সিকিভাগে তীব্র ক্ষোভ ও বিরোধ দেখা গেছে। সম্ভাব্য একক প্রার্থীদের মাঠের কর্মকাণ্ড ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় বাদ পড়া জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গত ৩ নভেম্বর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘২৩৭ আসন শুধুই সম্ভাব্য তালিকা, এটি চূড়ান্ত নয়। শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং মাঠপর্যায়ের তথ্য বিবেচনা করে কিছু আসনে পরিবর্তন আনা হতে পারে।’
জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে কমপক্ষে সিকিভাগ আসনে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এসব আসনে স্থানীয় নেতারা প্রার্থী পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছেন। এ কারণে কয়েকদিন ধরে গুলশান কার্যালয়ে দলের সংশ্লিষ্টরা বৈঠক করছে। সেই বৈঠকের আলোচনাই গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত নীতিনির্ধারণী বৈঠকে তোলা হয়।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক মনে করছেন, বহু আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী ছিলেন। বঞ্চিতদের মধ্যে জনপ্রিয় তৃণমূল নেতারাও রয়েছেন। তাদের অন্য রাজনৈতিক দল প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। একই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মাঠে নামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। নানা প্রলোভনও দেওয়া হচ্ছে। এতে ভোট বিভাজনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের জয়ের সম্ভাবনা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। সব মিলিয়ে কয়েকটি আসনে ঘোষিত মনোনয়ন পরিবর্তন হতে পারে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তবে সেই পরিবর্তন স্থানীয় নেতাদের মতামত নিয়েই হবে।
এদিকে ঘোষিত ৬৩টি ফাঁকা আসনের বেশিরভাগ শরিক দলগুলোর জন্য ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। চলতি মাসের শেষ দিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শরিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
গত ৩ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণার পর এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যুগপৎ আন্দোলনে যাদের সঙ্গে আমরা ছিলাম, যেসব আসনে তারা আগ্রহী, সেসব আসনে আমরা কোনো প্রার্থী দিইনি। শরিক দলগুলো তাদের নাম দিলে আমরা তা চূড়ান্ত করব।’
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সাংবাদিকদের বলেন, ‘কয়েকটি আসনে ক্ষোভ থাকতে পারে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। ফাঁকা আসন সব শরিকের জন্য রাখা হবে না, এর মধ্যে দলীয় আসনও রয়েছে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন