সিরাজগঞ্জের গ্রামটি শত শত পাখিতে মুখর
![]() |
| শামুকখোল পাখিদের যাতে কেউ বিরক্ত না করেন, সেটা নিশ্চিত করেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার উলিপুর গ্রামের বাসিন্দারা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উলিপুর গ্রাম। চলনবিলের শান্ত এ গ্রামে বহু শতাব্দী প্রাচীন, শত বিঘা আয়তনের একটি দিঘি রয়েছে। দিঘিটির চারপাশে গড়ে উঠেছে মানুষের ঘরবসতি। এখানে একটি প্রাচীন বটগাছসহ বিভিন্ন গাছে বাসা করেছে শত শত শামুকখোল পাখি। পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে পুরো গ্রাম।
আলো ফুটতেই অবারিত চলনবিলের বিভিন্ন এলাকায় খাবারের খোঁজে চলে যায় পাখিদের দল। এ ওড়াউড়ি মুগ্ধ করে আশপাশের বাসিন্দাদের।
গতকাল শনিবার পাখিদের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কিছু শামুকখোল পাখি বটগাছের কচি পাতায় ঠোকর দিচ্ছে, আবার কিছু পাখি ছানাদের আগলে রাখছে। এক ডাল থেকে আরেক ডালে তারা ওড়াউড়ি করছে।
উলিপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আরশেদ আলী বলেন, প্রায় এক যুগ আগে শামুকখোল পাখিরা এখানে এসে গাছে বাসা বাঁধে। এরপর প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে বাচ্চা ফোটায়। স্থায়ীভাবে বসবাস করায় গ্রামবাসীরা সিদ্ধান্ত নেন, কেউ পাখিদের বিরক্ত করবে না এবং অন্যরাও যেন বিরক্ত না করে। দর্শনার্থীরা এলে তারা নিজেই মানুষকে সচেতন করেন।
মাহফুজা বেগম নামের এক গৃহবধূ বলেন, আগে শুধু আত্মীয়রা এ গ্রামে বেড়াতে আসতেন। এখন পাখি দেখতে অনেক মানুষ আসেন। পাখিদের বিশ্রামের জন্য গ্রামের মানুষ দিঘির পানিতে বাঁশ ও কঞ্চি দিয়ে আবাস তৈরি করেছেন। মাঝেমধ্যেই খাবারও দেওয়া হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘স্বাধীন জীবন’-এর পরিচালক মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, এ মৌসুমে তিনি একাধিকবার পাখি দেখতে উলিপুর গ্রামে গেছেন। শামুকখোলের দুটি প্রজাতির মধ্যে একটি এশীয়, আরেকটি আফ্রিকান। এই গ্রামে আসা শামুকখোল পাখিগুলো এশীয় প্রজাতির এবং সংরক্ষিত প্রাণীর তালিকায় আছে।
![]() |
| সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার উলিপুর গ্রামে শামুকখোল পাখি আবাস গড়েছে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন |
মাছ, কাঁকড়া, ব্যাঙ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী এই পাখির প্রধান খাবার বলে জানান মো. আবদুর রাজ্জাক। অনেকেই এই পাখিকে অতিথি পাখি মনে করেন, কিন্তু এটি বাংলাদেশের নিজস্ব আবাসিক পাখি। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও ভুটানে এরা দেখা যায়। উপযুক্ত আবহাওয়া, পর্যাপ্ত খাবারের জোগান এবং নিরাপত্তা থাকলে এরা সাধারণত একই স্থানে থাকে।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত জাহান বলেন, উলিপুর দিঘিসহ একাধিক স্থানে পাখির অভয়ারণ্য সংক্রান্ত খবর তিনি শুনেছেন। পাখিদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।


Comments
Comments