পাঁচ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন চেয়ে বিক্ষোভ-অবরোধ

টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। গতকাল দুপুরে মধুপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি-মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। গতকাল শনিবার পাঁচটি আসনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধনের পাশাপাশি সড়ক অবরোধ করেন ‘মনোনয়নবঞ্চিতদের’ অনুসারীরা। এতে যানজটে পড়তে হয় অনেক মানুষকে।

বিএনপি ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনের জন্য প্রাথমিকভাবে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। এর পর থেকেই দেশের বিভিন্ন আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাওয়া নেতাদের অনুসারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে নানা কর্মসূচি করছেন মনোনয়নবঞ্চিতদের সমর্থকেরা।

সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ
জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসনে প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন স্থানীয় বিএনপির একটি অংশের কর্মী-সমর্থকেরা। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ইসলামপুর উপজেলা শহরের বটতলা এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এই আসনে ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ ই সুলতান মাহমুদকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে দলের আরেক অংশ বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ এস এম আবদুল হালিমকে প্রার্থী করার দাবিতে গতকাল প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে।

আবদুল হালিমের সমর্থকেরা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে ইসলামপুর সরকারি কলেজ মাঠে জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে আসেন। এরপর প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে শহরের বটতলা এলাকায় প্রধান সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেন তাঁরা।

বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ থাকায় সড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। দেড় ঘণ্টা পর বিক্ষোভকারীরা সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। উপজেলা, পৌর শহর ও ১২টি ইউনিয়ন থেকে হাজারো নেতা-কর্মী এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন।

কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে এ এস এম আবদুল হালিম বলেন, ‘সব আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে সক্রিয় ছিলাম। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ১৪টি মামলার আসামি ছিলাম। সেই সময় দুর্বিষহ জীবন কাটিয়েছি। ফ্যাসিস্ট সরকার দ্বারা নির্যাতিত হয়েছি। সব সময় তৃণমূল নেতাদের পাশে ছিলাম, আছি ও থাকব। পুনর্বিবেচনা হলে মনোনয়ন পেতে পারি। দলই সবার আগে।’

এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অমান্য করে এসব কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের আসার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু তাঁরা আমার কাছে না এসে এসব করছেন।’

সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ী ফকির মাহবুব আনাম। তাঁর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে গতকাল দুপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ আলীর সমর্থকেরা।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মধুপুর উপজেলা সদরের ময়মনসিংহ সড়ক থেকে মোহাম্মদ আলীর সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দুপুর ১২টার দিকে বাসস্ট্যান্ড এলাকার আনারস চত্বরে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল-জামালপুর সড়ক অবরোধ করে। তবে বেলা একটায় অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। অবরোধ চলাকালে দুই সড়কে দীর্ঘ যানজট হয়।

অবরোধস্থলের সমাবেশে বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা আসনটিতে মোহাম্মদ আলীকে প্রার্থী করার দাবি জানান।

সাতক্ষীরা-২ (সদর ও দেবহাটা) আসনে বিএনপি–মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী পৌর মেয়র তাজকিন আহমেদ চিশতীর অনুসারীরা। আসনটিতে মনোনয়ন পেয়েছেন সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রউফ।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা শহরের সংগীতা মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। এরপর নিউমার্কেট মোড় জিরো পয়েন্ট এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাজকিন আহমেদের সমর্থকেরা। প্রায় এক ঘণ্টা আশাশুনি-সাতক্ষীরা, যশোর-সাতক্ষীরা ও খুলনা-সাতক্ষীরা সড়ক বন্ধ থাকায় পুরো এলাকায় তীব্র যানজট হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা সড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর অজিয়ার রহমান, ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিনুর রহমান, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সৈয়দ জাহিদুর রহমান বারী, সহসভাপতি মো. মাহমুদ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক শিহাবুজ্জামান প্রমুখ।

কুড়িগ্রাম-১ (ভূরুঙ্গামারী ও নাগেশ্বরী) আসনে বিএনপি-মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল দুপুরে নাগেশ্বরীর বাস টার্মিনাল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন জেলা বিএনপির সদস্য ও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের যুগ্ম মহাসচিব ইউনুছ আলীর সমর্থকেরা। তাঁরা এই আসনে ইউনুছ আলীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।

এই আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুর রহমানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ইউনুছ আলীকে মনোনয়ন বঞ্চিত করায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ‘অযোগ্য’ প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় বারবার বিএনপি সেখানে পরাজিত হয়েছে। তাই প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে আবার বিবেচনার জন্য কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে ‘স্থানীয়’ নেতাদের কাউকে প্রার্থী না করায় বিক্ষোভ চলছে। গতকাল বিকেলে পবা উপজেলার নওহাটা বাজারে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের নওহাটা কলেজ মোড় এলাকায় স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, রাজশাহীর ছয় আসনের মধ্যে পাঁচটিতে স্থানীয় প্রার্থী দেওয়া হলেও এই আসনে ‘বহিরাগত’ একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তিনি হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক শফিকুল হক। তিনি দীর্ঘদিন স্থানীয় রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। তিনি রাজশাহী-২ (সদর) আসনের ভোটার। তাঁর প্রতি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আস্থা নেই। তাই প্রার্থী পরিবর্তন করতে হবে।