১৩ নভেম্বর নিরাপত্তা আরও বাড়বে: ডিএমপি কমিশনার
![]() |
| সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে | ছবি: ডিএমপির সৌজন্যে |
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। তিনি জানান, ওই কর্মসূচির দিন ১৩ নভেম্বর নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ১৩ নভেম্বর নিয়ে নানা গুজব ও আশঙ্কার কথা ছড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকাবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। মোটরসাইকেলে করে এসে যারা এক-দুটি ককটেল ছুড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, আমরা খুব শিগগিরই তাদের ধরব।’
গত দুই দিনে ঢাকায় কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাকে ঘিরে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী।
তিনি জানান, গত কয়েক দিনে ঢাকার ১৫টি স্থানে ১৭টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গত দুই দিনে ৯টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় ১৭টি মামলা হয়েছে এবং নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার আশা প্রকাশ করেন, ঢাকাবাসীই নাশকতা ঠেকিয়ে দেবে। তিনি বলেন, ‘অতীতে যেসব স্বৈরশাসক পতনের মুখে পড়েছিল, তাদের দলের নাশকতাও ঢাকাবাসী প্রতিরোধ করেছিল। এবারও ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও অন্য সংস্থাগুলো একসঙ্গে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই।’ তিনি আরও জানান, মাঠের কর্মকর্তাদের নিয়মিত নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত দলের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক জানতে চান, ঢাকার অপরাধজগতের অনেক সন্ত্রাসী কারাগার থেকে ছাড়া পেয়েছে, তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে—ডিএমপি কি সেটি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে? জবাবে ডিএমপি কমিশনার সাজ্জাত আলী বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীতে অপরাধ এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। চলতি বছরের এপ্রিল-মে মাসে যে হারে ছিনতাই ও দিনের বেলা মোহাম্মদপুরে চাপাতি নিয়ে রাস্তার মাঝখানে হামলার ঘটনা ঘটত, এখন সেগুলোর অনেক উন্নতি হয়েছে।’
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে পুলিশ রাস্তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাতেই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘এমন কোনো দল বা গোষ্ঠী নেই, যারা নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামেনি। কিন্তু পুলিশ কোনো মারণাস্ত্র ব্যবহার না করেই, এমনকি লাঠিপেটা ছাড়াই, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।’
শেখ সাজ্জাত আলী আরও বলেন, ‘ঢাকা মহানগর পুলিশের নীতি হলো—আমরা কাউকে লাঠিপেটা করতে চাই না। একান্ত প্রয়োজন হলে শুধু পানি ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। যেমনটা আপনারা শিক্ষকদের আন্দোলনের সময় দেখেছেন।’
উচ্চ আদালতে নিরাপত্তা নিয়ে আইনজীবীদের উদ্বেগ আছে, সেখানে নিরাপত্তা জোরদারের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘উচ্চ আদালত হলো মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার জায়গা। সেখানে যেতে কাউকে বাধা দিতে চাই না। তবে ১৩ নভেম্বরের আগেই সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এমন কিছু করতে চাই না, যাতে বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন।’
‘বাইরে থেকে এসে ঝটিকা মিছিল করে আবার চলে যায়’
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, নিষিদ্ধ একটি দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করছে। অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত তারা ১৪টি ঝটিকা মিছিল করেছে। এ সময় ঝটিকা মিছিলের পরিকল্পনা, অর্থায়ন ও অংশগ্রহণের সঙ্গে জড়িত ৫৫২ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই রাজধানীর বাইরে থেকে এসেছে। অর্থের বিনিময়ে তারা ঢাকায় এসে এসব মিছিলে অংশ নিয়ে আবার শহরের বাইরে চলে যায়।
অপরিচিত ব্যক্তিদের আশ্রয় না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মেস, হোটেল ও গেস্টহাউসে অতিথিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করছি। আপনার নামে থাকা মোটরসাইকেল অন্য কাউকে ব্যবহারের জন্য বা ভাড়ায় দেওয়ার আগে খেয়াল রাখুন, সেটা যেন কোনো দুষ্কৃতকারীর হাতে না পড়ে। আপনার এলাকায় কোনো অপরিচিত ব্যক্তি বা সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখলে নিকটস্থ থানায় বা ৯৯৯ নম্বরে জানান।’
ঢাকায় অনেক সিসি ক্যামেরা অচল—সেগুলো সচল করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা পুরো ঢাকা মহানগরকে একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে কাজ করছি। ঢাকাকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে পুরো শহর সিসি ক্যামেরার আওতায় আসবে।’

Comments
Comments