[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

বাসায় ঢুকে ছেলেকে খুন, এক সপ্তাহ আগে হুমকির কথা জানিয়ে জিডি করেছিলেন বিচারকের স্ত্রী

প্রকাশঃ
অ+ অ-

হামলার ঘটনায় আহত বিচারকের স্ত্রী তাসনিম নাহারকে অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে ওয়ার্ডে নেওয়া হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

রাজশাহীতে বাসায় ঢুকে বিচারকের ছেলেকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় আটক যুবক সম্প্রতি পরিবারটিকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ কারণে হুমকি পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার ৬ নভেম্বর সিলেটের জালালাবাদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আবদুর রহমানের ভাড়া বাসায় ঢুকে তাঁর ছেলে তাওসিফ রহমানকে (সুমন) ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। একই হামলায় তাসমিন নাহারও (৪৪) ছুরিকাঘাতে আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন অভিযুক্ত লিমন মিয়া। আহত হওয়ায় তাকেও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জিডিতে তাসমিন নাহার তাঁর স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা হিসেবে সিলেট নগরের জালালাবাদ থানার খাদরা মডেল টাউনের নাম উল্লেখ করেন। আর অভিযুক্ত লিমন মিয়ার (৩৫) ঠিকানা লেখা হয়েছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ভবানিগঞ্জ এলাকা।

লিমন মিয়া | ছবি: সংগৃহীত 

জিডিতে তাসমিন নাহার উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের সদস্য হওয়ার সূত্রে লিমন মিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। লিমন মিয়া আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়ায় মুঠোফোনে প্রায়ই তাসমিন নাহারের কাছে টাকা সাহায্য চাইতেন। একপর্যায়ে এভাবে নিয়মিত টাকা চাইলে তিনি না করার কথা জানান। এরপর লিমন মিয়া ফোন করে তাঁকে হুমকি দিতে শুরু করেন। সবশেষ ৩ নভেম্বর সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে লিমন মিয়া তাসমিন নাহারের মেয়ের ফেসবুক মেসেঞ্জারে কল করে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হত্যার হুমকি দেন। এতে নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করায় তিনি জিডি করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানার ওসি শাহ মোহাম্মদ মুবাশ্বির বলেন, ‘জজ স্যারের স্ত্রীকে ওই যুবক দীর্ঘদিন ধরে বিরক্ত করত। ভয় দেখিয়ে তাঁকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা দাবি করছিল। কয়েক দিন আগে ৬ নভেম্বর ম্যাডাম সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তাঁর মেয়েকে দেখতে আসেন।’

ওসি বলেন, ‘ম্যাডাম সিলেট এসেছেন শুনে ওই যুবকও সিলেটে আসে এবং অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁকে আটক করে পুলিশের কাছে দেন। ম্যাডাম ওই ঘটনায় জিডি করেছেন, মামলা করেননি। তাই পুলিশ ওই যুবককে জিডির ভিত্তিতে গ্রেপ্তার দেখাতে পারেনি। তবে তাঁকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচারকের পরিবারের কারও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হামলাকারী হিসেবে আটক যুবক বিচারকের বাসায় ঢোকার সময় ভবনের দারোয়ানের কাছে থাকা খাতায় নিজের নাম ‘লিমন’ লিখেছেন। ‘বিচারকের ভাই’ পরিচয় দিয়ে তিনি পাঁচতলায় ফ্ল্যাটে যান।

রাজশাহী নগরের ডাবতলা এলাকার এই ভবনের পাঁচতলায় ভাড়া থাকেন বিচারক আব্দুর রহমান। হামলার পর পুলিশের তৎপরতা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ভবনটির দারোয়ান মেসের আলী বলেন, ওই যুবককে তিনি আগে কখনো দেখেননি। বিচারকের ভাই পরিচয় দেওয়ায় তিনি তাঁকে ঢুকতে দেন। তবে তার আগে নাম ও মুঠোফোন নম্বর লিখিয়ে নেন। বেলা আড়াইটার দিকে ওই যুবক ফ্ল্যাটে যান। প্রায় ৩০ মিনিট পর ফ্ল্যাটের গৃহকর্মী এসে জানান, ফ্ল্যাটে বিচারকের ছেলে ও স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। এর মধ্যে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারাও চলে আসেন। সবাই ফ্ল্যাটে ঢুকে তিনজনকেই আহত অবস্থায় পান। এরপর তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হামলাকারীর পকেট থেকে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি চালক। তাঁর সঙ্গে পূর্ববিরোধ থাকতে পারে। কেন এই ঘটনা ঘটেছে, তা তাঁরা এখনো বিস্তারিত জানেন না।

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন