স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠক, সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই আটক

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর প্রবেশপথে তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশের সদস্যরা। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ডাকা ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে আরও কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে সরকার। কোনো ব্যক্তি নাশকতা করতে পারেন, এমন সন্দেহ হলেই তাঁকে আটক করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সেখানেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) অনলাইনে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ডেকেছে। ওই দিনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করবে। মামলার আসামিদের মধ্যে আছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন, যিনি এই মামলায় অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষী। জুলাই হত্যাযজ্ঞ–সংক্রান্ত এটি প্রথম মামলা, যার রায় ঘোষণার তারিখ ঘোষণা হতে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির আগে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কয়েকটি জায়গায় বাসে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ঝটিকা মিছিলের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পর গত রোববার আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গতকাল হয় আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক। আটজন উপদেষ্টার সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি সরকারের নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে পরামর্শ দেয়।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা আওয়ামী লীগ কী ধরনের তৎপরতা চালাতে পারে, তা তুলে ধরেন। একটি সংস্থার প্রতিনিধি জানান, বরিশাল অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মী ঢাকায় এসেছেন এবং বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীদের সম্ভাব্য অবস্থান ঘিরে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বাড়তি তৎপরতা। এর অংশ হিসেবে রামপুরা এলাকায়  তল্লাশি চালানো হয়। মঙ্গলবার সকালে রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

ঢাকায় রাস্তার পাশে খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি হয়। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেখান থেকে তেল নিয়ে অগ্নিসংযোগ ঘটাতে পারেন—বৈঠকে এমন আশঙ্কার কথা ওঠে। আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয়, আগামী নির্বাচন পর্যন্ত খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ থাকবে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে একটি বাহিনীর প্রতিনিধি বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মসূচিকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলা করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে অলিগলিতে পাহারা দেওয়া কঠিন।

এ বিষয়ে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক দলগুলোকে তৎপরতা বাড়াতে বার্তা দেওয়া হবে। বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনের সময় ব্যবহারের জন্য পুলিশের জন্য বিশেষ ক্যামেরা কেনা হবে, যেগুলো ‘বডি–ওর্ন’ ক্যামেরা নামে পরিচিত। বৈঠকে র‍্যাব ও আনসার সদস্যদের নতুন পোশাকও উপস্থাপন করা হয়। আনসার সদস্যদের জন্য নতুন পোশাক চূড়ান্ত হয়েছে, আর র‍্যাবের পোশাকে কিছু পরিবর্তন আনা হবে। উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের নতুন পোশাক ঠিক করা হয়েছিল। তখন পোশাকের রঙ নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। এখন র‍্যাব ও আনসারের পোশাকে পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, নাশকতা ঘটাতে পারে—এমন সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে হবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশে যেকোনো ধরনের অরাজকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দৃঢ় অবস্থানে আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে, কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর প্রবেশপথে তল্লাশি চালাচ্ছেন পুলিশের সদস্যরা। গতকাল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান চলছে। কিছু অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি, সেগুলো দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গ্রামগঞ্জে মাদক ছড়িয়ে পড়ছে—এটা রোধে সবার সহযোগিতা দরকার।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, কয়েক জায়গায় বাসে আগুন ও কিছু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি সব রাজনৈতিক দলকে অগ্নিসংযোগসহ সব ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

নির্বাচন সামনে রেখে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে কোনো সন্ত্রাসী দেশে ঢোকার আশঙ্কা আছে কি না—এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং সেখানে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হচ্ছে, যাতে কোনো সন্ত্রাসী দেশে ঢুকতে না পারে।

সন্ত্রাসীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার অপরাধে জড়িত হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, তাঁরা যদি অন্য কোনো অপরাধ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত হন, তাহলে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।