‘আ.লীগের 'লকডাউন’ ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকার পরও আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘লকডাউন’ কর্মসূচি নিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সম্ভাব্য নাশকতা রোধ করতে শুরু হয়েছে ব্যাপক অভিযান, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনাবাহিনী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আগামী বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করবেন। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি ও সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলটির পলাতক নেতাকর্মীরা নানা ধরনের উসকানি ও হুমকি ছড়াচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
ডিএমপির সদরদফতর জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যেকোনো ধরনের উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে রাজধানীতে বিভিন্ন সময়ে মিছিল কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকলেও, লকডাউন ঘোষণার পরও বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে দলের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচির আগে সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যদিও ১৩ নভেম্বর বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কা কম, তবু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছে না।
গত সোমবার ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আগারগাঁও, মিরপুর, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। মেরুল বাড্ডা, শাহজাদপুর ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় কেউ হতাহত না হলেও নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ জানায়, বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের প্রতিটি ঘটনাস্থল ঘিরে তদন্ত চলছে এবং দায়ীদের শনাক্তে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে, রাজধানীতে এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে রাজনৈতিক বার্তা ছড়ানোর পরিকল্পনার অভিযোগে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ২৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। রোববার ডিএমপি এ তথ্য জানায়।
এর আগে শনিবার ডিএমপি সদরদফতরে এক জরুরি বৈঠকে ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়—যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে এবং গ্রেপ্তার অভিযান জোরদার করতে। পরদিন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সাত হাজার পুলিশ সদস্যের টহল ও মহড়া শুরু হয়। র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও সহিংসতা প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে।
ডিএমপি ও র্যাব সূত্র জানায়, ১০ নভেম্বর থেকে ঢাকার প্রবেশপথ, হোটেল, মেস এবং বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে বিশেষ তল্লাশি শুরু হয়েছে। সঙ্গে সাইবার মনিটরিং, গ্রেপ্তার অভিযান ও টহল বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদরদফতর সব থানাকে নির্দেশ দিয়েছে যেন বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঢুকতে না পারে। এজন্য গণপরিবহন, রেল ও নৌপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গোষ্ঠী নাশকতার হুমকি দিচ্ছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মাঠে আছি। কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, '১৩ নভেম্বরকে কেন্দ্র করে আমরা সাইবার মনিটরিং, টহল এবং গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করেছি। এটি গুজব হোক বা বাস্তব পরিকল্পনা—আমরা প্রতিটি তথ্য যাচাই করছি। দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা সতর্ক আছি।'
র্যাব ও পুলিশের উভয় সূত্র মনে করছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের এখন বড় ধরনের সংঘাত সৃষ্টির ক্ষমতা নেই, তবে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ও উসকানিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।
পুলিশ সদরদফতরের এআইজি (মিডিয়া ও পিআর) এ এইচ এম শাহাদাত হোসেন বলেন, 'আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আগাম তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা তৎপরতা চলছে। কেউ অবৈধ কর্মকাণ্ড, নাশকতা বা সংঘর্ষের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, 'ফ্যাসিবাদী সরকার পালিয়ে গেছে গণমানুষের প্রতিরোধে। এখন তারা বিদেশ থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে এবং থাকবে।'

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন