[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

দ্বীপের একমাত্র সরকারি কলেজের পাঠদানে শিক্ষক অভাব

প্রকাশঃ
অ+ অ-
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সরকারি হাজী আবদুল বাতেন কলেজ। সম্প্রতি তোলা | ছবি: পদ্মা ট্রিবিউন 

ছয় তলা নতুন একাডেমিক ভবনে এখন লিফট বসানোর কাজ চলছে। আছে বড় সবুজ মাঠ আর শান্ত পরিবেশ। বাইরে থেকে কলেজের চেহারা দেখলে কেউ নাফেরা করতে পারবে না। কিন্তু ভেতরের অবস্থা অনেকটাই ভিন্ন। শিক্ষক ও কর্মী কম থাকায় কলেজটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।

এটি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সরকারি হাজী আবদুল বাতেন কলেজের চিত্র। এটি দ্বীপ উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজ। সাড়ে ছয় একরের এই ক্যাম্পাসে সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, অধ্যক্ষসহ মাত্র তিনজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। ছয় তলা ভবনের নিচতলায় শুধু একজন অফিস সহায়ক ছাড়া আর কেউ নেই। খোঁজে জানা গেছে, শিক্ষকের ৫১টি পদের মধ্যে ৩৩টি শূন্য।

কলেজটির অধ্যক্ষ এস এম আবুল হাশেম জানান, শিক্ষক সংকট থাকায় তাঁকেও অতিরিক্ত ক্লাস নিতে হয়। অন্যান্য পদেও লোকবল কম। এর প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলেও।

কলেজে শিক্ষার্থী আছে ২ হাজার ৫০০ জন। ৫১টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৮ জন। গেল বৃহস্পতিবার কলেজে গিয়ে পাওয়া গেছে ১১ জনকে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজে চারটি বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। বাকি বিষয়ে শিক্ষকদের অনেকেই নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। তাই পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। এছাড়া ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, শারীরিক শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিক্ষকের পদও খালি। বিজ্ঞান বিভাগের রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা ও গণিতে শিক্ষক থাকার কথা তিনজন করে। কিন্তু বাস্তবে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন করে। কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ৬২ জন। শিক্ষক সংকটের কারণে তারা ভোগান্তিতে পড়ছে।

সংকট এখানেই শেষ নয়। বাংলায় স্নাতক (অনার্স) কোর্স থাকলেও তা চলছে মাত্র দুজন প্রভাষক দিয়ে। তাঁরা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ক্লাসও নেন। আর ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ক্লাস হয় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক দিয়ে।

অধ্যক্ষ এস এম আবুল হাশেম বলেন, ‘শিক্ষক সংকটের কারণে পাঠদানে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। আমরা পাঁচজন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি, কিন্তু এটি টেকসই সমাধান নয়। শূন্যপদ পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় চাহিদা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি, কিন্তু এখনও কোনো সাড়া পাইনি।’

বিজ্ঞান বিভাগের প্রদর্শক পদের চারটি শূন্য। এতে ব্যবহারিক ক্লাস বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হিসাবরক্ষক, প্রধান সহকারী, গ্রন্থাগারিকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদেও কেউ নেই। তাই প্রশাসনিক কাজও এগোতে পারছে না। কলেজের নথি অনুযায়ী, ২৮টি পদের মধ্যে মাত্র ১০টিতে জনবল আছে।

লোকবলের এই সংকটের প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ফলেও। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কৃতকার্য শিক্ষার্থীর হার মাত্র ৩৬ দশমিক ৬৭ ভাগ। মানবিক বিভাগে ১৫ দশমিক ৫১ ভাগ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২০ দশমিক ২৮ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সন্দ্বীপের অন্য চারটি বেসরকারি কলেজের তুলনায় এ কলেজে পাসের হার সবচেয়ে কম।

অভিভাবকরাও অসন্তুষ্ট। কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীর অভিভাবক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েও ছেলেমেয়েরা এমন ভোগান্তিতে পড়লে তারা কোথায় যাবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবিলম্বে সংকট দূর করতে হবে।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা) খোদেজা খাতুন বলেন, ‘সন্দ্বীপসহ দূরের কলেজগুলোতে আমরা যাদের পদায়ন করি, তাঁরা সেখানে থাকতে চান না। তাঁরা নানা ছুঁতোয় অন্যত্র বদলি হয়ে যান। অনেক শিক্ষক থাকলেও মাসে মাত্র দু-এক দিন উপস্থিত থাকেন। এই সংকট সমাধানের কার্যকর পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা নিয়ে আমরা ভাবছি।’

Fetching live reactions...
Was this article helpful?

Comments

Comments

Loading comments…
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন