এনসিপির নেতৃত্বে চার দলের নতুন জোট গঠনের আলাপ
| জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) |
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে চারটি দলের জোট হওয়ার প্রাথমিক আলোচনা চলছে। আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) এই জোটে থাকতে পারে। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরে থাকা ছোট দলগুলোকে এক করলে শিগগিরই এই জোটের ঘোষণা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এনসিপি সূত্র জানায়, গত কয়েক মাস ধরে এই দলগুলোর নেতাদের মধ্যে জোট গঠনের বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। ফ্যাসিবাদ-বিরোধী অবস্থান এবং জুলাই সনদ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য রয়েছে। তবে নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে না চাওয়া এনসিপির একজন শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় কোনো শক্তিকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। আমরা এনসিপির নেতৃত্বে তৃতীয় শক্তি গড়ার কথা ভাবছি। এখন পর্যন্ত এবি পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও আপ বাংলাদেশের সঙ্গে কথা চলছে। পরে আরও দু–একটি দল যুক্ত হতে পারে।’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা তরুণদের নিয়ে তৃতীয় একটি বলয় তৈরি করতে চাই, যাদের সঙ্গে আমাদের মতের মিল আছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি নিয়েও কোনো কথা হয়নি।’
জুলাই সনদসহ কয়েকটি বিষয়ে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে এই দূরত্ব কমানোর চেষ্টা হলেও তা সফল হয়নি। তাই বিএনপি–জামায়াতের বাইরে এসে ছোট দলগুলোর দিকেই মনোযোগ দিতে চায় তরুণদের নতুন দলটি।
এ বিষয়ে এনসিপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন নেতা বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াতের কথা আমরা একসময় ভেবেছি। কিন্তু তাদের কিছু সংকীর্ণতা এবং অতীতের কর্মকাণ্ড আছে। আমাদের যে মূল্যায়ন পাওয়ার কথা, সেটিও তারা দিতে চায় না। মাত্র এক বছর আগের জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিও তারা ভুলে যাচ্ছে। তাই আমরা তাদের ওপর নির্ভর না করে নিজেদের নেতৃত্বে নতুন জোট গড়তেই গুরুত্ব দিচ্ছি।’
জোট নিয়ে আলোচনা চললেও এনসিপির বেশির ভাগ নেতা–কর্মী চান দলটি এককভাবে নির্বাচন করুক। বিভিন্ন ফোরামেও দলের বড় অংশ একক নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন।
গত রোববার দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও জানিয়েছেন, এনসিপি ৩০০ আসনেই এককভাবে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী গতকাল সোমবার রাতে বলেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই একটা নতুন জোট দেখা যাবে। এই জোট হবে নারীদের পক্ষে, আলেম–ওলামার পক্ষে, দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে।
অন্যদিকে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু গত রোববার ফেনীর এক মতবিনিময় সভায় বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন জোট গঠনের কাজ এগোবে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে যারা দল হিসেবে সামনে থেকে ভূমিকা রেখেছে, তাদের নিয়ে এই জোট গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জোটে এবি পার্টির সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল থাকবে।
জোটের বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘আমরা এমন মধ্যপন্থী দলগুলো নিয়ে ঐক্য করতে চাই, যাদের সঙ্গে মতের জায়গায় আমরা এক থাকতে পারব। এ ক্ষেত্রে এবি পার্টি বা যাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আমাদের ফোরামে আলোচনা শেষে নেওয়া হবে।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন