ধানমন্ডিতে কারা বিড়ালের চোখ উপড়ে ফেলে দিচ্ছে?
| বিড়াল | প্রতীকী ছবি |
ধানমন্ডি এলাকায় কয়েক দিনের ব্যবধানে চারটি বিড়াল উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলোর চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল। প্রাণীপ্রেমীরা এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তে নেমেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বিড়ালগুলো পোষা প্রাণী ছিল বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারা এভাবে চোখ উপড়ে ফেলেছে এবং কোথায় ফেলে গেছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে সন্দেহভাজনদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রাণীপ্রেমী সারহা ফাতিমা গত রোববার ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ করেন। তিনি জানান, ধানমন্ডি ১২/এ এলাকার তাকওয়া মসজিদের আশপাশে কয়েক দিনের মধ্যে চারটি বিড়াল চোখ উপড়ে ফেলা অবস্থায় পড়ে ছিল। তাঁর ধারণা, এটি কোনো সিরিয়াল অপরাধীর কাজ—যিনি ইচ্ছে করে নিরীহ প্রাণীর ওপর এমন নির্যাতন চালাচ্ছেন। এমন নিষ্ঠুরতা ভবিষ্যতে মানুষের প্রতিও সহিংসতা বাড়াতে পারে। প্রাণী কল্যাণ আইনে এ ধরনের কাজ দণ্ডনীয় অপরাধ।
উদ্ধার হওয়া দুটি বিড়াল এখন পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জে প্রাণীপ্রেমী ইলিন জাহানের কাছে আছে। তিনি বলেন, 'আমরা রাস্তায় অসুস্থ বিড়াল উদ্ধার করে চিকিৎসা করি। ফেসবুক গ্রুপে আমাদের নম্বর দেওয়া আছে। কেউ ফোন করলে আমরা বিড়ালগুলো নিয়ে আসি।' বর্তমানে তাঁর কাছে প্রায় ৫০টি বিড়াল রয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদের কাছে প্রাণীপ্রেমী জায়নাব রহমান চৌধুরী ফোন করে জানান, 'একটি বিড়াল চোখে সমস্যাসহ পাওয়া গেছে। প্রথমে বিষয়টি তেমন গুরুত্ব পায়নি। পরে ধানমন্ডির একটি ক্লিনিকে নেওয়া হলে দেখা যায়, একটি চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, আরেকটি পুরো নষ্ট। এরপর সেখানে চিকিৎসা দেওয়া হয়।'
ইলিন জাহান বলেন, ৩১ অক্টোবর বিকেলে জায়নাব আবার ফোন করে জানান, একই এলাকা থেকে আরেকটি অসুস্থ বিড়াল পাওয়া গেছে। ওই বিড়ালের দুটো চোখই উপড়ে ফেলা হয়েছিল। সেটিকেও এনে চিকিৎসা করা হয়।
বিড়াল দুটির অবস্থা সম্পর্কে ইলিন বলেন, 'একটির অবস্থা খুবই খারাপ, আরেকটির মোটামুটি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, চোখগুলো কোনো ধারালো জিনিস দিয়ে খোঁচানো হয়েছে। মনে হচ্ছে, কোনো মানসিকভাবে বিকৃত ব্যক্তি এমন কাজ করেছে, যে প্রাণীর কষ্ট দেখে আনন্দ পায়।'
৩১ অক্টোবর একই এলাকা থেকে রুমানা বৈশাখী নামের আরেক প্রাণীপ্রেমীও একটি চোখ উপড়ে ফেলা বিড়াল উদ্ধার করেন।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী জায়নাব রহমান চৌধুরী বলেন, '৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় তিনি ধানমন্ডি লেকের পাড় ধরে হাঁটছিলেন। তাকওয়া মসজিদের পাশে একটি বিড়াল চোখ উপড়ে ফেলা অবস্থায় বসে ছিল। এরপর তিনি ইলিন জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিড়ালটি তাঁর কাছে পাঠান। শুক্রাবাদ থেকেও অসুস্থ বিড়াল উদ্ধারের খবর পেয়েছেন তিনি।'
জায়নাব জানান, স্থানীয়রা কাছে শুনেছেন তাঁরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে দুটি বিড়াল চোখ উপড়ে ফেলা অবস্থায় দেখেছেন। তিনি বলেন, 'সেদিন আমি একটিই পাই, পরদিন আরেকটি উদ্ধার হয়। আমি প্রায়ই লেকে গিয়ে কুকুর ও বিড়ালদের আদর করি।'
| ধানমন্ডি এলাকায় বিড়ালের ওপর নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদে ছাত্রদল ও বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে মানববন্ধন | ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া |
এ ঘটনায় গত ৪ নভেম্বর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের উদ্যোগে মানববন্ধন হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এটি সাধারণ কোনো দুর্ঘটনা নয়। তাঁদের ধারণা, এর পেছনে কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তির হাত আছে, যিনি বিড়ালের যন্ত্রণায় আনন্দ পাচ্ছেন।
ধানমন্ডি থানার ওসি ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, 'অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। যেখানে বিড়ালগুলো পাওয়া গেছে, সেসব এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে যারা বিড়ালগুলো ফেলে গেছে, তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন