[tenolentSC] / results=[3] / label=[ছবি] / type=[headermagazine]

অনৈক্য রেখে সংবিধানে হাত না দিতে ৫৩ নাগরিকের বিবৃতি

প্রকাশঃ
অ+ অ-
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গত ২৮ অক্টোবর তাঁদের সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেন | ফাইল ছবি

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি মীমাংসা না করে সংবিধান সংস্কারে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের ৫৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁদের আশঙ্কা, এতে দেশ দীর্ঘস্থায়ী সংকটে পড়তে পারে। তাই মতৈক্য না হওয়া পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমেই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

গত সপ্তাহে ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে বিতর্ক চলছে। এর মধ্যেই আজ শনিবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান নাগরিক সমাজের সদস্যরা।

জুলাই জাতীয় সনদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করার পর গত ২৮ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন তাদের সুপারিশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেয়। এরপর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করছে, সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার তফসিলে কিছু আপত্তিকর বিষয় বাদ পড়েছে। আবার গণভোটের সময় নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এখনো এই সনদে সই করেনি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব থেকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (আপত্তি) বাদ দেওয়ায় অনৈক্য তৈরি হয়েছে—এ বিষয়টি নজরে এসেছে বলে জানিয়েছেন নাগরিক সমাজের ৫৩ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি।

তাঁরা বলেন, দীর্ঘ কয়েক মাসের প্রচেষ্টায় একদল মানুষের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে বহুল আলোচিত জুলাই সনদ। এজন্য তাঁরা ধন্যবাদপ্রাপ্য। তবে সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ প্রকাশের পর আবারও মতভেদ দেখা দিয়েছে। তাই জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশনের কাজ চালিয়ে যাওয়া জরুরি।

বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধান একটি দেশের অস্তিত্ব ও ঐক্যের প্রতীক। সংবিধান ও সংসদের মর্যাদা রক্ষা করতে ঐক্যের বিকল্প নেই। ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দেওয়ায় এ ঐক্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি না মিটিয়ে তাড়াহুড়া করে সংবিধান সংস্কার আনলে অনৈক্য বাড়বে এবং দেশের রাজনীতিতে গভীর সংকট দেখা দিতে পারে।

বিবৃতিদাতারা সতর্ক করে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে ঐক্য না থাকলে ‘ফ্যাসিস্ট’ শক্তির পুনরুত্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এতে জুলাই সনদের মূল লক্ষ্য—গণভোট বা জাতীয় নির্বাচন আয়োজন—ব্যর্থ হতে পারে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে সুপারিশ জমা দেওয়ার পরদিন, গতকাল শুক্রবার। তার এক দিন পরই ৫৩ নাগরিক এই আহ্বান জানিয়েছেন।

তাঁরা বলেন, অন্যান্য দেশে সংবিধানের মৌলিক পরিবর্তনে আলোচনা চলে দীর্ঘ সময় ধরে। তাই বর্তমান সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য সময় বাড়ানোই যুক্তিযুক্ত হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, সব বিষয়ে সব দলের একমত হওয়া সম্ভব নয়। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর সংসদে এবং সংসদের বাইরে এসব আপত্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া দরকার। আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছালে তা সবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। এজন্য ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া ২৭০ দিনের (নয় মাস) সময়সীমা বাড়িয়ে দুই বছর বা আরও যৌক্তিক সময় নির্ধারণের প্রস্তাব দেন তাঁরা।

ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কার আদেশের খসড়ায় ২৭০ দিনের মধ্যে প্রস্তাব পাসের কথা বলেছে। বিকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ে সংসদ বা সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রস্তাবটি পাস না করলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে।

এ ছাড়া ঐকমত্য কমিশনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি এতে নতুন করে লেখক, চিন্তক, অধিকারকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন ৫৩ নাগরিক। তাঁদের মতে, অরাজনৈতিক অংশের অংশগ্রহণ রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদ কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে।

গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন সালাহ উদ্দিন শুভ্র, তাতে অন্যরা সম্মতি জানিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। বিবৃতিদাতারা হলেন কবি কাজল শাহনেওয়াজ, শিক্ষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর রাজী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম সারওয়ার ও আমিরুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মনসুর তমাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল ফজল, আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব; কবি, লেখক ও সংগঠক নাহিদ হাসান, গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবুল কালাম আল আজাদ, কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, কথাসাহিত্যিক গাজী তানজিয়া, মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন, কথাসাহিত্যিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, প্রকাশক সাঈদ বারী ও মাহাবুবুর রহমান, কবি মৃদুল মাহবুব, সংগীতশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অমল আকাশ, কবি ও সংগঠক চিনু কবির, প্রকাশক সাঈদ বারী, কবি ও অনুবাদক জামাল ভাস্কর, সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম সাব্বির, আইনজীবী মমিনুর রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সংগীতশিল্পী ইমামুল বাকের এপোলো, সাংবাদিক অনি আতিকুর রহমান, কবি ও সাংবাদিক পলিয়ার ওয়াহিদ, কথাসাহিত্যিক রাসেল রায়হান, কবি সানাউল্লাহ সাগর, কবি ও সংগঠক এনামুল হক পলাশ, রাজনৈতিক কর্মী শাকিলা খাতুন, রাজনৈতিক কর্মী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল মজিদ অন্তর, গবেষক তানভীর আহমেদ, কবি সোয়েব মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী, চলচ্চিত্র গবেষক হারুন-অর-রশিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক তছলিমা শাহনুর, কবি মাসুম মুনওয়ার, লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী আরিফ রহমান, কবি ও কথাসাহিত্যিক জব্বার আল নাঈম, মানবাধিকারকর্মী ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য রাফসান আহমেদ, থিয়েটার কর্মী আশরাফুল ইসলাম, কবি ও সম্পাদক সাজ্জাদ বিপ্লব, কথাসাহিত্যিক পিন্টু রহমান, জুলাই যোদ্ধা রকিব লিখন, চলচ্চিত্র নির্মাতা শাহনেওয়াজ আরেফিন, কবি ও কথাসাহিত্যিক শাদমান শাহিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক আফসানা জাকিয়া, কবি ও অধিকারকর্মী শামীম রেজা এবং কবি ও অধিকারকর্মী ফুয়াদ সাকী। 

একটি মন্তব্য করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন