বিমানবন্দরের ভল্ট ভেঙে চুরি হলো ৭ আগ্নেয়াস্ত্র
![]() |
| আগ্নেয়াস্ত্র চুরি | গ্রাফিকস: পদ্মা ট্রিবিউন |
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সের স্ট্রং রুমে ভয়াবহ আগুনের পর অক্ষত থাকা ভল্ট থেকে সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র চুরি হয়েছে। গত রোববার দুপুরে নিয়মিত পরিদর্শনের সময় এই চুরির ঘটনা ধরা পড়ে।
চুরি হওয়া অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এম–৪ কারবাইন রাইফেল ও ব্রাজিলের তৈরি টরাস পিস্তল। তবে কোন ধরনের অস্ত্র কতটি চুরি হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। সুরক্ষিত ভল্ট ভেঙে অস্ত্র হারানোর ঘটনায় বিমানবন্দরে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে এবং বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মহিদুল ইসলাম বলেন, 'ভল্ট ভাঙার বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় জিডি হয়েছে। কয়টি অস্ত্র চুরি হয়েছে, তা নিশ্চিত নই।'
গত ১৮ অক্টোবর শাহজালাল বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো কমপ্লেক্সে ভয়াবহ আগুন লাগে। প্রায় ১৭ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। তবে আগুনের তাপে কিছুটা পোড়া ছাড়া স্ট্রং রুমের ভেতরের জিনিসপত্র বেশির ভাগই অক্ষত ছিল। পরে বিভিন্ন সংস্থার উপস্থিতিতে স্ট্রং রুমটি সিলগালা করা হয়।
ওই ভল্টে মূল্যবান সামগ্রী, আমদানির কাগজপত্র, শুল্ক সংক্রান্ত নথি, সোনা, হীরা ও আগ্নেয়াস্ত্র রাখা ছিল। একাধিক নিরাপত্তা ধাপ পেরিয়ে অনুমোদন ছাড়া ভল্ট খোলা সম্ভব নয়।
বিমানবন্দর নিরাপত্তা বিভাগের সূত্র জানায়, ২৪ অক্টোবর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা স্ট্রং রুম পরিদর্শনে যান। তখন দেখা যায়, আগ্নেয়াস্ত্র রাখা ভল্টের তালা খোলা এবং ট্রাংক ভাঙা। সেখানে ২১টি অস্ত্র পাওয়া যায়—তিনটি কিছুটা পোড়া, ১৮টি বাক্সবন্দী। পরে ভল্ট ও ট্রাংক মেরামত করে আবার সিলগালা করা হয়।
এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের এম–৪ কারবাইন রাইফেল ও ব্রাজিলের টরাস সেমি–অটোমেটিক পিস্তল। এম–৪ সাধারণত পুলিশের স্পেশাল উইপনস অ্যান্ড ট্যাকটিকস (সোয়াট) ইউনিট ব্যবহার করে। এটি ৫.৫৬ মিলিমিটার ক্যালিবারের গ্যাসচালিত রাইফেল, যা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতেও ব্যবহৃত হয়।
আগুনের পর থেকে ভল্টের নিরাপত্তা দেখভাল করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ভল্ট ভাঙার ঘটনায় ২৮ অক্টোবর এয়ারলাইনসের সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) মো. জামাল হোসেন বিমানবন্দর থানায় জিডি করেন। সিআইডির ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে তালা কাটার সরঞ্জামসহ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে।
সূত্র জানায়, স্ট্রং রুমের ওই ভল্টে মূলত পুলিশ ও বৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীদের আমদানি করা অস্ত্র সংরক্ষিত ছিল। আগুনে অনেক নথি পুড়ে যাওয়ায় সেখানে মোট কত অস্ত্র ছিল, তা নিশ্চিত করা যায়নি। পরে গত রোববার দ্বিতীয় দফায় পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, আবার ভল্টের তালা খোলা ও ট্রাংক ভাঙা। তখন মিলিয়ে দেখা হয়—২১টি অস্ত্রের মধ্যে দুই ধরনের ৭টি অস্ত্র নেই। নতুন করে চুরি ঠেকাতে সোমবার অবশিষ্ট ১৪টি অস্ত্র থানায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা মনে করছেন, স্ট্রং রুমে সোনা–হীরা থাকা সত্ত্বেও শুধু অস্ত্র চুরি হওয়া ঘটনাটি রহস্যজনক।
২৪ অক্টোবরের প্রথম জিডির তদন্ত কর্মকর্তা, বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাইনুল ইসলাম বলেন, 'তদন্ত চলছে। কার্গো হাউসের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ আগুনে পুড়ে গেছে। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে।'
এদিকে আগুনে পুড়ে যাওয়া সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর জায়গায় এখনো নতুন ক্যামেরা বসানো হয়নি। ফলে ফুটেজ দেখে চোর শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। ঘটনাটি তদন্তে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন